পাকিস্তানে পার্লামেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচনটি সম্ভবত বিলম্বিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে দেশটিতে জনশুমারির ভিত্তিতে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী বুধবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার আদেশ দেয়ার পর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।
বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও তার সরকারের হাতে নতুন অন্তর্র্বতী নেতার নাম চূড়ান্ত করার জন্য তিনদিন সময় আছে।নির্বাচন কমিশনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, “জনশুমারি শেষ হলেই নির্বাচন হবে। এ জন্য চার মাস সময় দরকার হবে। ফলে নির্বাচনটি আগামী বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে”।
পাকিস্তানে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হলেও পিছিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন
শাহবাজ শরীফও সাংবাদিকদের সম্প্রতি বলেছিলেন যে এ বছর নির্বাচন নাও হতে পারে।যদিও দেশটিতে এমন আলোচনা আছে যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার মূল কারণ হলো ইমরান খানের জনপ্রিয়তার কারণে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) এর জোট নির্বাচনের জয়ের বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। পাশাপাশি আইএমএফ এর সহযোগিতা সত্ত্বেও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে সেখানে।

এক সময়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও ইমরান খান এমনভাবে সেনাবাহিনীর বিরোধে জড়িয়েছেন যা তার আগে কোনো রাজনীতিক করেননি।সিনিয়র বিশ্লেষক রাসুল বখশ রাইস এমনকি এটাও মনে করেন যে দণ্ডিত হয়ে গ্রেপ্তারের কারণেও ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। এর আগে গত মে মাসে ইমরান খানের গ্রেপ্তার নিয়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিলো, যাতে মারা গিয়েছিলো অন্তত আটজন এবং নজিরবিহীন হামলা হয়েছিলো সামরিক কিছু স্থাপনাতেও।
৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দাবি করেছিলেন যে সামরিক বাহিনীর লক্ষ্য হলো ‘তাকে বন্দী রেখে তার দলকে ধ্বংস করে দেয়া’। কিন্তু এবারেই সেই একই নিয়ম দেখা গেছে: পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে যেই চ্যালেঞ্জ করুক, এমনকি সেটা ইমরান খানের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব হলেও, তাকে সরে যেতে হবে। ১৯৭০ সাল থেকেই এটি হয়ে আসছে এবং এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হলেন ইমরান খান।
সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান “অঘোষিত সামরিক আইনে” চলছে। সাবেক সিনেটর আফরাসিয়াব খাত্তাক বিবিসিকে বলেন এখানে সমান্তরালভাবে দুটি সরকার কাজ করে। “অনুমোদনহীন ডি ফ্যাক্টো ফোর্স সবসময় সংসদীয় প্রক্রিয়ার ওপর খবরদারি করতে চায়,” বলছিলেন আফরাসিয়াব খাত্তাক। “পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সবসময়ই ক্ষমতাবান। কিন্তু তারা আরও ক্ষমতা চায় যাতে করে তাদের অনুমোদিত কর্মকাণ্ড কেউ চ্যালেঞ্জ না করে সেটা রাজনীতিক, অধিকার কর্মী কিংবা সাংবাদিক- যেই হোন না কেন”।

গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে দুটি ড্রাকোনিয়ান ল উপস্থাপিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্যেই হলো সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানো।জামাত-ই-ইসলামির সিনেটর মুশতাক আহমেদ বলেছেন এ আইন গোয়েন্দা সংস্থাকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি ও আটকের ‘ব্যাপক ক্ষমতা’ দিবে। “এর প্রভাব পড়বে মানবাধিকার, ব্যক্তি অধিকার ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর”।