৭ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, উদ্বোধনী অংশে চলমান কাজ শেষ পর্যায়ে। আমাদের অবকাঠামো প্রস্তুত, আমাদের ইকুইপমেন্টগুলো বসানো হচ্ছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সফট ওপেনিংয়ের পর এয়ারলাইনগুলো নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারবে। পুরোনো টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে ২৯টি বিমান রাখা যায়। সফট ওপেনিং হলে তৃতীয় টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে আরও ৮ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ রাখা যাবে।
৭ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
৭ অক্টোবর আংশিকভাবে চালু হলেও যাত্রীরা টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন ২০২৪ সালের শেষের দিকে। কারণ হিসেবে চেয়ারম্যান জানান, টার্মিনাল পরিচালনায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ক্যালিব্রেশন করতে সময় লাগবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ টার্মিনাল চালু হলে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এখানে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য মোট চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ) ১১৫টি।
১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। বর্তমান টার্মিনালে রয়েছে ৮টি লাগেজ বেল্ট। তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি আলাদা বেল্ট। ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরির কাজ চলমান।

থার্ড টার্মিনালের নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যানিটটননটিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। এ ছাড়াও থাকবে সুপরিসর ডিউটিফ্রি শপ এবং বহির্গমন লাউঞ্জ।তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। ধারণ ক্ষমতা প্রতি বছরে ১২ মিলিয়ন যাত্রী। টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার। ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ইকুইপমেন্টসহ ৪ হাজার বর্গমিটার। আমদানি কার্গো টার্মিনাল ২৭ হাজার বর্গমিটার, রপ্তানি কার্গো টার্মিনাল ৩৬ হাজার বর্গমিটার এবং কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। দুটি র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য কাস্টমের একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল থাকবে, যার আয়তন ১৩০০ বর্গমিটার। ভিআইপি যাত্রীদের জন্য রাখা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ভিভিআইপি ও ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশাল লাউঞ্জ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনালে।
৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের প্রধান বহির্গমন লাউঞ্জ ব্যবহার করবেন ট্রানজিট যাত্রীরা। তবে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না এখন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে করিডোর নির্মাণ হবে।বেবিচক চেয়ারম্যান আরো জানান, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে বহুতল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।