ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) সংসদীয় আসনে নির্বাচনী সমীকরণকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে স্থানীয় রাজনীতি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে এই আসনটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে উপজেলা বিএনপির একটি বিশাল অংশ। আজ শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ শহরে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে রাশেদ খানকে ওই এলাকায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাঁদের দাবি, কোনো ‘বহিরাগত’ নয় বরং দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও রাজপথের পরীক্ষিত স্থানীয় নেতৃত্বের হাতেই তুলে দিতে হবে ধানের শীষ।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কালীগঞ্জ শহরের প্রধান বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু হওয়া এই মিছিলে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকের পরনেই ছিল প্রতীকি কাফনের কাপড়, যা রাজপথে এক চরম উত্তেজনার সৃষ্টি করে। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বাসস্ট্যান্ডে এসে এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। এই নজিরবিহীন বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ এবং প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মিণী ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুর্শিদা জামান বেল্টু।
নিচে ঝিনাইদহ-৪ আসনের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:
ঝিনাইদহ-৪ আসনে রাজনৈতিক উত্তেজনার সারসংক্ষেপ
| বিষয়বস্তু | বিস্তারিত তথ্য ও বিবরণ |
| ঘোষিত প্রার্থী | রাশেদ খান (সাধারণ সম্পাদক, গণ অধিকার পরিষদ)। |
| মনোনয়ন প্রত্যাশী | সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মুর্শিদা জামান বেল্টু ও হামিদুল ইসলাম। |
| আন্দোলনের ধরণ | কাফনের কাপড় পরে মিছিল এবং রাশেদ খানকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা। |
| তৃণমূলের দাবি | শরিক দল নয়, ধানের শীষের প্রার্থী হতে হবে বিএনপির নিজস্ব নেতা। |
| বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র | কালীগঞ্জ শহরের প্রধান বাসস্ট্যান্ড ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। |
| সম্ভাব্য পরিণতি | কেন্দ্র সিদ্ধান্ত না বদলালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাধ্যমে নির্বাচনের হুঁশিয়ারি। |
বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে মুর্শিদা জামান বেল্টু অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, “আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের দুঃশাসনে আমরা জেল-জুলুম ও দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে রাজপথে লড়াই করেছি। তৃণমূলের কর্মীরা আজ অন্য কাউকে ধানের শীষের কাণ্ডারি হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। আমরা চাই রাজপথের ত্যাগী নেতার হাতেই দলের প্রতীক তুলে দেওয়া হোক।” অন্যদিকে, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ অভিযোগ তুলে বলেন, ঝিনাইদহ-২ আসনে রাশেদ খানের নির্বাচন করার কথা থাকলেও একটি মহলের ষড়যন্ত্র ও ‘অর্থের বিনিময়ে’ তাকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জনতা চাইলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
উল্লেখ্য, বিএনপি এবার কৌশলগত কারণে শরিকদের ২৮টি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বুধবার দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১০টি আসনে শরিক দলের নেতাদের নাম ঘোষণা করেন, যেখানে ঝিনাইদহ-৪ আসনটি রাশেদ খানকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। এই ঘোষণার পরপরই কালীগঞ্জের তৃণমূল বিএনপিতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। এমনকি উপজেলা যুবদলের দুই কর্মীর কানে ধরে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই বিক্ষোভ কেন্দ্রের ওপর কতটা চাপ তৈরি করতে পারে এবং কেন্দ্র তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
