জানুয়ারির মাঝামাঝি সাংবাদিকদের মহাসম্মেলন: নোয়াব সভাপতি

দেশের স্বাধীন ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের ওপর সাম্প্রতিক ধারাবাহিক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সারা দেশের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে একটি মহাসম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)। এই মহাসম্মেলন থেকেই পরবর্তী আন্দোলন ও কর্মসূচির চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ।

সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক যৌথ প্রতিবাদ সভা শেষে তিনি এই ঘোষণা দেন। প্রতিবাদ সভাটির আয়োজন করে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব। এতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে হোটেলের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে অংশগ্রহণকারীরা মানববন্ধন করেন এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে সংহতি জানান।

প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কে আজাদ বলেন, আজকের এই সমাবেশে অংশ নেওয়া সবাই একটি বিষয়েই একমত হয়েছেন—ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ছাড়া এই দমননীতি ও সহিংসতার মোকাবিলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে একটি মহাসম্মেলন আয়োজন করা হবে। সেখানে দেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং সেখান থেকেই পরবর্তী কর্মসূচির রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।

নোয়াব সভাপতি আরও বলেন, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীতে যারা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এবং সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। এটি কেবল দুটি সংবাদপত্র বা কয়েকজন সাংবাদিকের প্রশ্ন নয়; এটি দেশের গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার এবং সাংবিধানিক স্বাধীনতার প্রশ্ন।

ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার প্রসঙ্গ টেনে এ কে আজাদ বলেন, প্রথম আলোতে হামলার ঘটনার পর ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম আশঙ্কা করেছিলেন যে একই ধরনের হামলা ডেইলি স্টারেও হতে পারে। সে কারণে তিনি সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে আগাম নিরাপত্তার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সময়মতো কার্যকর কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যখন সহায়তা এসেছে, তখন আগুনে সবকিছু পুড়ে যাওয়ার পর এসেছে।

প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটি শুধু প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের ওপর হামলা নয়, এটি সরাসরি গণতন্ত্র ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর আঘাত। তিনি এই ঘটনাকে দেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়, যার ফলে পুরো ভবনটি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। একই রাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়েও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে প্রকাশ্যে হেনস্তা করা হয়। এসব ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।