বাংলাদেশের নারী ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল নাম সাবিনা খাতুন। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব এবং মাঠের ফুটবলে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও, সাবিনা প্রমাণ করেছেন যে দমে যাওয়ার পাত্রী তিনি নন। মাঠের ফুটবলের পাশাপাশি ইনডোর ফুটবলের রোমাঞ্চকর সংস্করণ ‘ফুটসাল’-এ নিজেকে পুনরায় নতুন করে প্রস্তুত করেছেন এই গোলমেশিন। দীর্ঘ সাত বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটসালের মঞ্চে ফিরছে বাংলাদেশ, আর এই নতুন যাত্রায় আবারও সেনাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে সাবিনা খাতুনের কাঁধেই।
আগামী ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ‘সাফ নারী ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৬’। এই টুর্নামেন্টকে লক্ষ্য করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ১৫ সদস্যের একটি শক্তিশালী ও ভারসাম্যপূর্ণ দল চূড়ান্ত করেছে। যেখানে অভিজ্ঞ সাবিনা খাতুনকে অধিনায়ক এবং গতিশীল ফরোয়ার্ড সুমাইয়া মাতসুশিমাকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলে ফিরেছেন মিশরাত জাহান মৌসুমী ও মার্জিয়ার মতো জ্যেষ্ঠ ফুটবলাররা, যা দলের আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
নিচে থাইল্যান্ড সফরের জন্য ১৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশ নারী ফুটসাল স্কোয়াড ২০২৬
| খেলোয়াড়ের নাম | ভূমিকা | বিশেষ দ্রষ্টব্য |
| সাবিনা খাতুন | অধিনায়ক | গোল করার সহজাত ক্ষমতার অধিকারী ও অভিজ্ঞ নেতা। |
| সুমাইয়া মাতসুশিমা | সহ-অধিনায়ক | জাপানি বংশোদ্ভূত ফুটবলার, তাঁর ক্ষিপ্রতা ফুটসালে বড় অস্ত্র। |
| মাসুরা পারভীন | ডিফেন্ডার | রক্ষণভাগ সামলানোর অন্যতম নির্ভরযোগ্য মুখ। |
| কৃষ্ণা রানী সরকার | ফরোয়ার্ড | ২০২২ সাফ জয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। |
| মিশরাত জাহান মৌসুমী | মিডফিল্ডার | দীর্ঘদিন পর দলে ফিরলেন তাঁর নিয়ন্ত্রণমূলক খেলার জন্য। |
| লিপি ও মেহেনুর | নতুন প্রতিভা | ফুটসালের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। |
| ইতি রানী ও সাথী বিশ্বাস | গোলরক্ষক | পোস্টের নিচে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। |
বাংলাদেশ দলের জন্য এই টুর্নামেন্টটি এক বড় পরীক্ষা। ২০১৮ সালে সর্বশেষ এশিয়ান কাপ ফুটসাল বাছাইপর্বে সাবিনার নেতৃত্বেই খেলেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ফুটসালে ফেরাটা সাবিনা, মাসুরা ও কৃষ্ণাদের জন্য ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জ। কারণ, সাধারণ ফুটবলের চেয়ে ফুটসাল অনেক বেশি দ্রুতগতির এবং ছোট জায়গায় সূক্ষ্ম কারুকার্য দেখানোর খেলা। ব্যাংককে যাওয়ার আগে দলটি নিবিড়ভাবে অনুশীলন করেছে যাতে করে তারা থাইল্যান্ডের আবহাওয়ায় নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
চূড়ান্ত দল ঘোষণা করতে গিয়ে বাফুফে জানিয়েছে, প্রাথমিক ক্যাম্পে থাকা উন্নতি খাতুন, নাসরিন আক্তার ও সেজুতি ইসলাম স্মৃতিকে শেষ মুহূর্তে বাদ দিতে হয়েছে দলের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে। তবে মৌসুমী ও মার্জিয়ার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি কোচিং স্টাফকে বাড়তি ভরসা দিচ্ছে। সাফ ফুটসালে দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করাই এখন সাবিনা ব্রিগেডের মূল লক্ষ্য। ব্যাংককের ইনডোর স্টেডিয়ামে সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারী ফুটসাল দল নতুন এক ইতিহাস রচনা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা দেশের ফুটবল অনুরাগীদের।
