বীমা খাতে লাইফ ফান্ড ও সম্পদ বৃদ্ধি পেলেও প্রিমিয়ামে মিশ্র ফল

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০২৪ সালের বীমা খাতের একটি পূর্ণাঙ্গ আর্থিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের বেসরকারি বীমা শিল্পে সম্পদের পরিমাণ এবং লাইফ ফান্ডের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও প্রিমিয়াম সংগ্রহ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে লাইফ বীমা খাতের প্রিমিয়াম আয়ে সামান্য পতন এবং নন-লাইফ খাতের বিনিয়োগে সংকোচন বীমা খাতের নীতিনির্ধারকদের জন্য নতুন ভাবনার উদ্রেক করেছে।

লাইফ বীমা খাতের বর্তমান চালচিত্র

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে লাইফ বীমা খাতের প্রিমিয়াম সংগ্রহের গ্রাফটি কিছুটা নিম্নমুখী। ২০২৩ সালে এই খাতে মোট প্রিমিয়াম আয় ছিল ১১৫,১০৭ মিলিয়ন টাকা, যা ২০২৪ সালে কমে ১১৩,৮৯৭ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে আশার কথা হলো, গ্রাহকদের জীবন বীমা তহবিলের সুরক্ষা বা ‘লাইফ ফান্ড’-এ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৩১৯,১৮২ মিলিয়ন টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৩৩২,৩২২ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে। এটি নির্দেশ করে যে, নতুন পলিসি সংগ্রহের হার কিছুটা কমলেও বিদ্যমান পলিসিগুলোর স্থায়িত্ব ও তহবিল ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক।

নন-লাইফ বীমা খাতের চিত্র

লাইফ বীমার বিপরীতে নন-লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। ২০২৩ সালের ৪২,৩৫১ মিলিয়ন টাকা থেকে ২০২৪ সালে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩,৪৯৫ মিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে। শতাংশের হিসেবে এ খাতে ২.৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে এই খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে, যা ৫৬,১৪০ মিলিয়ন টাকায় নেমে এসেছে।

নিচে লাইফ ও নন-লাইফ বীমা খাতের আর্থিক পরিস্থিতির একটি তুলনামূলক সারণি দেওয়া হলো:

বীমা খাতের বার্ষিক আর্থিক খতিয়ান (২০২৩ বনাম ২০২৪)

আর্থিক সূচক২০২৩ (মিলিয়ন টাকা)২০২৪ (মিলিয়ন টাকা)পরিবর্তনের হার (শতাংশ)
লাইফ প্রিমিয়াম আয়১১৫,১০৭১১৩,৮৯৭– ১.০৫%
লাইফ ফান্ডের পরিমাণ৩১৯,১৮২৩৩২,৩২২+ ৪.১১%
লাইফ বীমা বিনিয়োগ৩৩৪,৬১৩৩৪২,৯২৯+ ২.৪৯%
লাইফ খাতের মোট সম্পদ৪৪১,৪১১৪৬০,০৪৩+ ৪.২২%
নন-লাইফ প্রিমিয়াম আয়৪২,৩৫১৪৩,৪৯৫+ ২.৭০%
নন-লাইফ মোট সম্পদ১১৬,৪৯৪১১৯,১৮৭+ ২.৩১%
নন-লাইফ মোট বিনিয়োগ৫৭,৭২০৫৬,১৪০– ২.৭৪%

সম্পদ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ কৌশল

সামগ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বীমা কোম্পানিগুলো সফলতার পরিচয় দিয়েছে। লাইফ বীমা খাতে মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৬০,০৪৩ মিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে নন-লাইফ খাতেও সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯,১৮৭ মিলিয়ন টাকায়। বিশ্লেষকদের মতে, মোট সম্পদ ও তহবিলের এই ক্রমবর্ধমান ধারা দেশের বীমা খাতের আর্থিক ভিত্তি মজবুত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক ও আধুনিক কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

পরিশেষে, বিআইএ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বাংলাদেশের বীমা খাতেও কিছুটা পড়েছে। প্রিমিয়াম আয় স্থিতিশীল রাখা এবং বিনিয়োগে ভারসাম্য আনাই হবে আগামী বছরে এই খাতের প্রধান লক্ষ্য। বীমা খাতের এই আর্থিক সক্ষমতা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান আরও বৃদ্ধি পাবে।