খেলাপি ঋণের বিস্তার ঠেকাতে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বহু সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ কেন কমছে না—সে প্রশ্নের স্পষ্ট ব্যাখ্যাও চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। একই সঙ্গে চলতি মাসের মধ্যেই খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমিয়ে আনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত রবিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় দেশের সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ ডেপুটি গভর্নররা। সেখানে জানানো হয়—আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা বেড়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি, পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ী ও ভালো উদ্যোক্তা—সব পক্ষ মিলেই খেলাপি ঋণের বোঝা আরও জটিল করে তুলেছে। ঋণনীতির কঠোরতা এই বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
সভায় কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে এই দুই খাতে ঋণ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের দুইজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক গণমাধ্যমকে জানান, আগের নিয়মে সামান্য সমস্যাতেই ঋণকে খেলাপি ঘোষণা করা হতো। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে—এ ধরনের ঋণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম নষ্ট করছে এবং ব্যাংকগুলোর নতুন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
সভায় উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকা ও তার বেশি অঙ্কের মোট ঋণ ১০ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৬২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের ৭৭ শতাংশই রয়েছে বড় ঋণগ্রহীতাদের কাছে। বড় ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি রয়েছে মাত্র ২ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা, যা মোটের মাত্র ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
এপ্রিল থেকে জুন তিন মাসে ব্যাংকগুলো প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে ১৪ হাজার ৬৫২টি মামলা করেছে। বর্তমানে মামলায় আটকে আছে ৪ লাখ ৭ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। অর্থঋণ আদালতের মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৩৪১টি।
কম জমা দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পুনঃ তফসিলের বিশেষ সুবিধা বিষয়ে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে জানানো হয়—১ হাজার ৫১৬টি আবেদনের বিপরীতে রয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকার ঋণ। শীর্ষ ২০ গ্রুপ পুনঃ তফসিল চেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ইতোমধ্যে ৩০০ উদ্যোক্তার ৯০০ আবেদন নিষ্পত্তি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ২৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা।
এজে