৮১ দিন ধরে গোল নেই: ভিনিসিয়ুসের ফর্মহীনতার ব্যবচ্ছেদ

একসময় যার ড্রিবলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর গ্যালারি প্রকম্পিত হতো, আজ সেই দর্শকদের দুয়োধ্বনি সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হচ্ছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে। গত শনিবার রাতে সেভিয়ার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ ২-০ গোলে জয় পেলেও শিরোনামে ছিলেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে কোচ জাবি আলোনসো (জাবি আলোনসো) যখন তাঁকে তুলে গঞ্জালো গার্সিয়াকে নামান, তখন নিজের ঘরের মাঠেই সমর্থকদের তীব্র বিদ্রূপের মুখে পড়েন তিনি। গোল করতে ভুলে যাওয়া এক ফুটবলারের প্রতি সমর্থকদের এই অনাস্থা এখন রিয়াল মাদ্রিদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ।

পরিসংখ্যান বলছে, ভিনিসিয়ুস তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম ভয়াবহ গোলখরা পার করছেন। রিয়াল মাদ্রিদ এবং ব্রাজিল ন্যাশনাল টিম (ন্যাশনাল টিম) মিলিয়ে টানা ১৭টি ম্যাচে তিনি কোনো গোল পাননি। রিয়ালের জার্সিতে তাঁর গোলহীন থাকার সময়টা ১১১৬ মিনিটে পৌঁছেছে, আর সব মিলিয়ে তিনি ১৩৩৪ মিনিট ধরে জালের দেখা পাননি। অথচ দুই মৌসুম আগেও তিনি ছিলেন রিয়ালের গোল মেশিনের অন্যতম প্রধান অংশ। বর্তমান মৌসুমে তাঁর গোলের গড় এতটাই নিচে নেমেছে যে, প্রতি গোলের জন্য তাঁকে প্রায় ৩৫৬ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

নিচে ভিনিসিয়ুসের গত কয়েক মৌসুমের গোলের হারের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো:

ভিনিসিয়ুসের গোলের হারের পরিসংখ্যান (মিনিট প্রতি গোল)

সিজন বা মৌসুমমোট গোল সংখ্যাপ্রতি গোলের ব্যবধান (মিনিট)পারফরম্যান্সের মান
২০২২-২৩২৪ গোল১২৮ মিনিটএক্সিলেন্ট (এক্সিলেন্ট)
২০২৩-২৪২২ গোল২১০ মিনিটস্ট্যান্ডার্ড (স্ট্যান্ডার্ড)
২০২৪-২৫ (বর্তমান)০৫ গোল৩৫৬ মিনিটপুওর (পুওর)
২০২০-২১০৬ গোল৪৫৩ মিনিটক্যারিয়ার ওস্ট (ক্যারিয়ার ওস্ট)

ভিনিসিয়ুসের এই ছন্দপতনের পেছনে মানসিক চাপকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্যারিসে ব্যালন ডি’অর (ব্যালন ডি’অর) ট্রফি জেতার ক্ষেত্রে রদ্রির কাছে হেরে যাওয়ার পর ভিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন দশগুণ শক্তিশালী হয়ে ফেরার। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা; সেই রাতের পর থেকে ৬৭ ম্যাচে তিনি মাত্র ১৯টি গোল করেছেন। চলতি মৌসুমে রিয়ালের করা মোট ৫২টি গোলের মধ্যে ভিনির অবদান মাত্র ৯ শতাংশ, যা রিয়ালের মতো ক্লাবের মূল স্ট্রাইকিং ফোর্সের জন্য বেশ হতাশাজনক।

মাঠের ফর্মের পাশাপাশি কোচ জাবি আলোনসোর সাথে তাঁর সম্পর্কের রসায়ন নিয়েও নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। যদিও কোচ সমর্থকদের অভিব্যক্তিকে ‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, তবে মাঠের দুয়োধ্বনি ভিনির আত্মবিশ্বাসে বড় ফাটল ধরাচ্ছে। স্প্যানিশ স্পোর্টস ডেইলি মার্কা (মার্কা) জানিয়েছে, ভিনির এই নাজুক পরিস্থিতির সুযোগ নিতে প্রস্তুত ইউরোপের অনেক জায়ান্ট ক্লাব। ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও বার্নাব্যুর ক্রমবর্ধমান চাপ সামলে ভিনি কি পারবেন আবারও সাম্বা নাচে দর্শকদের মাতাতে? বড়দিনের ছুটি কাটিয়ে মাঠে ফেরার পর তাঁর পারফরম্যান্সই নির্ধারণ করে দেবে রিয়ালে তাঁর ভবিষ্যৎ।