বাংলাদেশের পেস বোলিং যে গত কয়েক বছরে দৃশ্যমানভাবে এগিয়েছে, তা এখন আর কেবল দেশীয় বিশ্লেষকদের বক্তব্যে সীমাবদ্ধ নয়—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনেও বিষয়টি স্বীকৃতি পাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ডেলিভারির মালিক, পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। ঢাকায় এসে বাংলাদেশের পেসারদের নিয়ে খোলামেলা প্রশংসা করলেন ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’।
বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের মেন্টর হিসেবে কাজ করতে ঢাকায় এসেছেন শোয়েব আখতার। বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে ঘিরে ছিল ব্যাপক আগ্রহ। বিপিএলের চেয়ে ফাস্ট বোলিং নিয়েই প্রশ্ন ছিল বেশি—যা খুবই স্বাভাবিক। কারণ শোয়েব আখতার মানেই ২০০৩ বিশ্বকাপে কেপটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার গতির সেই ঐতিহাসিক ডেলিভারি, যা এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম।
বাংলাদেশে আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শোয়েব বলেন, “বাংলাদেশে ফেরার সুযোগ পেলে আমি সব সময়ই আসব। এটা বাংলাদেশের প্রতি আমার ভালোবাসা। এই সুযোগ আমি কখনো হাতছাড়া করি না।” তাঁর কণ্ঠে ছিল আন্তরিকতা, চোখেমুখে আত্মবিশ্বাস।
বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সবার আগে তাসকিন আহমেদের নাম নেন শোয়েব। ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে এবারের বিপিএলে খেলবেন তাসকিন। তাঁকে নিয়ে শোয়েব বলেন, “তাসকিনকে দেখলে বোঝা যায়, সে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে। খুব তীক্ষ্ণ, খুব মনোযোগী। এমন ফাস্ট বোলার দেখতে ভালো লাগে।”
এরপর বাংলাদেশের সামগ্রিক পেস আক্রমণ প্রসঙ্গে শোয়েবের মন্তব্য আরও আশাবাদী। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশের পেস ব্যাটারি ভালো করছে। আমি সত্যিই আশা করি, তারা বিশ্বকাপে অনেক দূর যাবে। বাংলাদেশ আসন্ন বিশ্বকাপে একটি শক্ত দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে।”
শোয়েব আখতারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সময় বাংলাদেশ পেস আক্রমণ এতটা শক্তিশালী ছিল না—এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তিনি বর্তমান প্রজন্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাসকিন আহমেদের পাশাপাশি নাহিদ রানা, মোস্তাফিজুর রহমান, ইবাদত হোসেন, তানজিম হাসান ও খালেদ আহমেদের নাম উঠে আসে আলোচনায়। সেই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, শোয়েবের সময়ের আরেক গতিময় বোলার শন টেইট বর্তমানে বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ।
নাহিদ রানার উন্নতির জন্য শোয়েবের পরামর্শ ছিল স্পষ্ট ও বাস্তবভিত্তিক। তিনি বলেন, “ফাস্ট বোলিং মানেই শরীরের ওপর প্রচণ্ড চাপ। সেই চাপ নিতে হলে শক্ত মাংসপেশি দরকার। উচ্চমানের প্রশিক্ষণ, গতি ধরে রাখা আর সঠিক মানসিকতা—এই তিনটি ঠিক রাখতে পারলে নাহিদ বিশ্বের অন্যতম সেরা হতে পারে।” তাসকিনের ক্ষেত্রেও তিনি একই গুণাবলি ইতিমধ্যে দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য আসে, যখন শোয়েবকে জিজ্ঞেস করা হয়—তাসকিন ও নাহিদকে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ পেসারদের কাতারে দেখেন কি না। উত্তরে শোয়েব বলেন, “নাহিদ আর তাসকিন অবশ্যই সেই কাতারে। ওই তালিকায় আছে বুমরা, শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ—এরা সবাই।”
শোয়েব আখতারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার (সংক্ষেপে)
| ফরম্যাট | ম্যাচ | উইকেট |
|---|---|---|
| টেস্ট | ৪৬ | ১৭৮ |
| ওয়ানডে | ১৬৩ | ২৪৭ |
| টি-টোয়েন্টি | ১৫ | ১৯ |
শেষ দিকে বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন শোয়েব। লিটন দাসের প্রশংসা করেন এবং বলেন, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যেকোনো বড় দলকে হারাতে সক্ষম। শন টেইটকে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের জন্য “অসাধারণ কোচ” আখ্যা দিয়ে শোয়েব স্পষ্ট করে দেন—টেইট থাকলে তাঁর আলাদা করে কোচিং ভূমিকার প্রয়োজন নেই।
সব মিলিয়ে, শোয়েব আখতারের কণ্ঠে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আত্মবিশ্বাস শোনা গেল, তা নিঃসন্দেহে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।