বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান ক্রমেই বেড়েই চলেছে। দেশ বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা প্রতি বছর যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান, তা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এই টাকা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চালনা করছে এবং লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবনধারাকে সমর্থন দিচ্ছে। চলতি ডিসেম্বরেও প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এই গুরুত্বপূর্ণ অর্থপ্রবাহ শক্তিশালী রূপেই অব্যাহত রয়েছে এবং এ মাসে রেমিট্যান্স ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.১৭২১ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমান বিনিময় হার ১ ডলারে ১২২ টাকা ধরা হলে, এটি প্রায় ২৬,৫০০ কোটি টাকার সমতুল্য, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের প্রতিফলন।
ব্যাংকিং বিশ্লেষকরা আশাবাদী, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে ডিসেম্বরের মোট রেমিট্যান্স ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটি শুধু প্রবাসীদের অবিচল সমর্থনকে প্রদর্শন করবে না, বরং বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতাকেও আরও মজবুত করবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করবে।
গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ ১.৯৮৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২.১৭২১ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ৯.৫ শতাংশের বৃদ্ধিকে নির্দেশ করছে। এটি প্রমাণ করে প্রবাসীদের দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে।
ফিসক্যাল বছরের বৃহত্তর চিত্রে, জুলাই থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত, বাংলাদেশ প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫.২১ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের ১৩.১২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। এটি বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবদান ক্রমবর্ধমান হচ্ছে তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
নভেম্বর মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহ শক্তিশালী ছিল; ২.৮৮৯৫ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠানো হয়েছে, যা প্রায় ৩৫,২৫২ কোটি টাকার সমতুল্য। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বছরের শেষ পর্যন্ত এই ধারা বজায় থাকলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও দৃঢ় হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে সমর্থন করবে।
বছরের শেষের দিকে এই শক্তিশালী অর্থপ্রবাহ দেশের অর্থনৈতিক আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। প্রবাসীদের অবদান দেশের অর্থনৈতিক সুস্থতা, স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে।
