রাকসু–ছাত্রদল উত্তেজনায় ক্যাম্পাসে তোলপাড়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও ছাত্রদলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেওয়া বক্তব্য ও তার প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও সচেতন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

সোমবার দুপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আয়োজিত স্বাগত মিছিল-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে দেওয়া ওই বক্তব্যে তিনি রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারকে উদ্দেশ করে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন। তিনি দাবি করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল চাইলে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই তাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিতে সক্ষম। এই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।

শাকিলুর রহমান সোহাগ তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন, আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিন অফিসসহ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর অফিসে তালা দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এর প্রতিবাদে বিবৃতি দেয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেই প্রতিবাদকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে; তবে রাকসুর কয়েকজন নেতা ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছেন।

এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি শাকিলুর রহমানের বক্তব্যকে ‘হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি ক্যাম্পাসে বোঝা হয়ে থাকতে চান না এবং স্বল্প সময় থাকলেও দায়িত্বশীলভাবে থাকবেন। পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এই পোস্টও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বাক্‌যুদ্ধ আরও তীব্র হয়।

উল্লেখ্য, ওই দিন দুপুর দেড়টার দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বর থেকে ছাত্রদলের স্বাগত মিছিল শুরু হয়। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে মিছিলটি সমাবেশে পরিণত হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘মা মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’, ‘তারেক রহমান ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর পর জনসমর্থনের শক্তিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন। তিনি দাবি করেন, দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করাই এই প্রত্যাবর্তনের মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে ২৫ ডিসেম্বরের পর যারা মব সৃষ্টি করে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করবে, তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তিনি।

ঘটনাপ্রবাহের সংক্ষিপ্ত চিত্র

বিষয়বিবরণ
স্থানরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কর্মসূচিতারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে স্বাগত মিছিল
বক্তব্যের সূত্রছাত্রদলের সমাবেশ
বিতর্কের কেন্দ্রছাত্রদল নেতা ও রাকসু জিএসের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য
প্রতিক্রিয়াসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনা

সার্বিকভাবে, এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশকে আবারও উত্তপ্ত করে তুলেছে। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে দায়িত্বশীল আচরণ ও সংলাপই হতে পারে উত্তরণ পথ।