ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ফেরিঘাটসংলগ্ন লছমনগঞ্জ এলাকায় ভূমিকম্পে হেলে পড়া সাততলা ভবনের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা এই ভবনটি দ্রুত খালি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজউকের একটি ভ্রাম্যমাণ দল সরেজমিন অভিযানে গিয়ে ভবনটির বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে। ভবনটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত সাত্তার কসাই নামে পরিচিত আবদুর সাত্তার মিয়ার মালিকানাধীন।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বেলায়েত হোসেন বলেন, ভবনটি রাজউকের নকশা ও অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে গুরুতর ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি)-এর বিশেষজ্ঞ দল ভবন পরিদর্শনে এসে প্রাথমিকভাবে একে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং অবিলম্বে ভবন খালি করার সুপারিশ দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভবনমালিককে বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি নির্দেশ অমান্য করেন। বাসিন্দাদের জীবন–ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বাধ্য হয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বুয়েটের বিস্তারিত কারিগরি প্রতিবেদন হাতে পেলে ভবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অন্যদিকে ভবনমালিক আবদুর সাত্তার মিয়া বলেন,
“ভবন খালি করার জন্য কিছুদিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই রাজউক সংযোগ কেটে দিয়েছে।”
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তা (জোন–৫) সাঈদা ইসলাম, ইমারত পরিদর্শক আব্দুল আলীম তালুকদার, তৌফিকুজ্জামান, শাহিনুর ইসলাম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ সদস্য এবং ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–৪-এর কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ২১ নভেম্বর সকালে ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে ভবনটি পাশের একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের দিকে হেলে পড়ে। ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গেই ভবনমালিক ও ভাড়াটিয়াদের দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ভবনমালিক প্রশাসনের নির্দেশ মানেননি। এতে ভবনের বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন।
ঘটনার সারসংক্ষেপ (তথ্য টেবিল):
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| ভবনের অবস্থান | লছমনগঞ্জ, জিনজিরা ফেরিঘাট, কেরানীগঞ্জ |
| ভবনের মালিক | আবদুর সাত্তার মিয়া (সাত্তার কসাই) |
| ভবনের উচ্চতা | সাততলা |
| মূল সমস্যা | ভূমিকম্পে হেলে পড়া ও অনুমোদনবিহীন নির্মাণ |
| সংযোগ বিচ্ছিন্নের তারিখ | ১০ ডিসেম্বর |
| ঝুঁকির মূল্যায়ন | আইইবি ভবনটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা |
| প্রশাসনের প্রাথমিক নির্দেশ | ২১ নভেম্বর ভবন খালি করতে বলা হয় |
| মালিকের সাড়া | নির্দেশ অমান্য, অতিরিক্ত সময়ের দাবি |
| অভিযান পরিচালনা | রাজউক, পুলিশ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–৪ |
রাজউক ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতে, ভবনটি অতি দ্রুত খালি না করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।
