মণপ্রতি ৩৫০ টাকা পর্যন্ত গমের দাম বেড়েছে, কেজিতে গড়ে ৮ টাকা ৭৫ পয়সা বেড়েছে। ভারতের গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার চার দিনের ব্যবধানে পশ্চিমের জেলাগুলোতে গমের দাম মণপ্রতি ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সঙ্গে ভুট্টার দামও মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়েছে। বোরো ধান বাজারে উঠছে। ভরা মৌসুমেও ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
মণপ্রতি ৩৫০ টাকা পর্যন্ত গমের দাম বেড়েছে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পশ্চিমের যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় ৩২ হাজার ৫৪৫ হেক্টরে গমের চাষ হয়েছে। এবার গমের ফলনও ভালো হয়েছে। গম উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন। মার্চ মাস থেকে গম কাটা শুরু হয়ে এপ্রিলে শেষ হয়েছে। নতুন গম ওঠার পর প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল।
এরপর দাম বেড়ে প্রতি মণ ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। গত বুধবার এক লাফে দাম বেড়ে প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। চাষি ও ব্যবসায়ীরা বাজারে গম ছাড়ছেন না। এর আগে মঙ্গলবার শৈলকুপা হাটে প্রতি মণ গম ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা দরে কেনাবেচা হতে দেখা য়ায়। শৈলকুপার গম ব্যবসায়ী শম্ভু সাহা জানান, টেলিভিশনে ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের খবর শোনার পর দাম চড়ে গেছে। এই অঞ্চলের গমের বড় মোকাম কুষ্টিয়া। সেখানকার গড়াই আটা মিলের মালিক আইনুর রহমান টিটু বলেন, ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের খবর শুনে ব্যবসায়ী ও চাষিরা গম বিক্রি করছেন না। বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।

এতে আটার মিলগুলো সংকটে পড়েছে। তিনি জানান, দুই দিন আগেও প্রতি মণ গম ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছিল। বর্তমানে কুষ্টিয়ার মোকামে ১ হাজার ৬৫০ টাকা দরে প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার তেরঘরিয়া গ্রামের চাষি জিয়াউর রহমান জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে গম চাষ করেন। ৩৫ মণ গম উৎপাদন হয়। এর আগে প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। সোমবার বাজারে গিয়ে শোনেন, দাম বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ভুট্টার দাম মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমের ৬ জেলায় ৮১ হাজার ৮৭৪ হেক্টরে ভুট্টার চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১১ দশমিক ১৩ মেট্রিক টন করে গড় ফলন হয়েছে। উক্ত হিসাবে ৯ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। বোরো চাষ হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৬৭৯ হেক্টরে। বোরোর ভরা মৌসুম চলছে। কিন্তু বাজারে দাম চড়া। ১ হাজার টাকা মণের নিচে ধান মিলছে না। ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। এবার পশ্চিমের জেলাগুলোতে ৪৬ হাজার ৩১ হেক্টরে মসুর ও ৪৯ হাজার ৮৬১ হেক্টরে সরিষা চাষ হয়। ৬৭ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন মসুর ও ৬৫ হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন সরিষার্ উৎপাদন হয়।

১০ দিন আগে প্রতি মণ মসুরের দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৯০০ টাকা মণ। আর সরিষার প্রতি মনের দাম ছিল ৩ হাজার ৩০০ টাকা। দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪ হাজার টাকা। দাম বাড়ার পর মসুর ডালের দাম চড়ে খুচরা প্রতি কেজি ১২৫ টাকা ও সরিষার তেল প্রতি কেজি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক হূদয়শ্বর দত্ত বলেন, কৃষিপণ্যের দাম বাড়লে চাষি লাভবান হয়। এতে তাদের চাষে আগ্রহ বাড়ে। এর বাইরে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।