‘আপনার মেয়েকে মেরে ফেলেছি, লাশ নিয়ে যান’: গাজীপুরে পাষণ্ড স্বামীর নিষ্ঠুরতা

গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল চান্দনায় পারিবারিক কলহের এক বর্বরোচিত সমাপ্তি ঘটেছে। তুচ্ছ ঘটনার জেরে মাস্তুরা আক্তার সুমা (২৮) নামে এক নারী পোশাক শ্রমিককে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন তাঁর স্বামী জালাল উদ্দিন দুলু। ঘটনার নৃশংসতা ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছে অভিযুক্ত স্বামীর চরম ধৃষ্টতা। স্ত্রীকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর শ্বশুরকে ফোন করে শীতল কণ্ঠে জানান, “আপনার মেয়েকে মেরে ফেলেছি। ঘরে লাশ, এসে নিয়ে যান।” শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে পুলিশ তালাবদ্ধ ঘর থেকে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় সুমার মরদেহ উদ্ধার করলে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহত সুমা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার পূর্ব নড়াইল গ্রামের মিরাজুল ইসলামের কন্যা। তাঁর স্বামী জালাল উদ্দিন দুলুর বাড়ি রংপুর জেলায়। এই দম্পতি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা হাজি মার্কেট এলাকার রমিজ ভিলার একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন এবং উভয়েই স্থানীয় ‘টেক্স ইউরো বিডি’ গার্মেন্টে কাজ করতেন।

ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো:

হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের বিবরণ

বিষয়ের বিবরণবিস্তারিত তথ্যবিশেষ মন্তব্য
নিহত ব্যক্তিমাস্তুরা আক্তার সুমা (২৮)।পোশাক শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অভিযুক্তজালাল উদ্দিন দুলু (স্বামী)।ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
হত্যার সময়২৫ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাত।রাত ১২টার পর এই ঘটনা ঘটে।
হত্যাকাণ্ডের স্থানঈমান আলী মোড়, চান্দনা, গাজীপুর।ভাড়া বাসার তৃতীয় তলার ঘর।
প্রাথমিক কারণপারিবারিক বিবাদ ও ঝগড়া।প্রায়ই ঝগড়া হতো বলে পুলিশের ধারণা।
আইনি প্রক্রিয়াবাসন থানায় হত্যা মামলা দায়ের।বাদী নিহতের পিতা মিরাজুল ইসলাম।

পুলিশ ও প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে কারখানা থেকে বাসায় ফিরে গৃহস্থালি কাজ সারেন সুমা। রাত ১২টার দিকে স্বামী দুলু বাসায় ফিরলে দুজনের মধ্যে প্রবল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দুলু সুমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং বিছানায় লাশটি কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দুলুর ফোন পেয়ে সুমার বাবা ও আত্মীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং ঘরটি তালাবদ্ধ দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দরজা ভেঙে নিথর দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, “স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। হত্যার পর অভিযুক্ত নিজেই অপরাধ স্বীকার করে তাঁর শ্বশুরকে ফোন করেছিলেন। এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” অভিযুক্ত জালাল উদ্দিন দুলুকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান শুরু করেছে। কর্মস্থল থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব স্থানেই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার খুনি দুলুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।