হিজাব মন্তব্যে রাবিতে উত্তেজনা, অধ্যাপকের দুঃখপ্রকাশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুনের এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তার পোস্টে ছাত্রীদের হিজাব নিয়ে ‘কটূক্তি’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার রাতে ওই পোস্টের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামে এবং অধ্যাপকের শাস্তির দাবি জানায়। পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রতিবাদের মুখে অধ্যাপক মামুন প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেন।

দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) পাঁচ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতির কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়।

ফেসবুকে ব্যক্তিগত টাইমলাইনে অধ্যাপক আ-আল মামুন ছাত্রী হল সংসদের শপথ অনুষ্ঠানের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, “এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!”

কয়েক মিনিট পর পোস্টটি মুছে ফেলেন তিনি এবং দাবি করেন, কারও পোশাক নিয়ে ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্য তার ছিল না। কিন্তু ইতোমধ্যে পোস্টটির স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে শিক্ষার্থীরা রাত ১১টার দিকে জোহা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। পরে তারা ছাত্রীদের হল প্রদক্ষিণ করে রবীন্দ্র ভবনের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়।

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়,  “মামুন তুই কুলি কর, মদের গন্ধ দূর কর”, “ওয়ান টু থ্রি ফোর, মামুন ইজ নো মোর”, “এই মুহূর্তে মামুনকে বহিষ্কার করতে হবে” ইত্যাদি।

 

বিতর্কিত পোস্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পর অধ্যাপক আ-আল মামুন মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে আরেকটি পোস্টে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি লিখেন, “আমি এক এগারোর সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করে জেল খেটেছি। ২০১৩ সাল থেকে নানাভাবে ক্যাম্পাসে ও বাইরে জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে লিখেছি, বলেছি। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম।”

তিনি আরও লিখেন, “স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের মুহূর্তে নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম হয়েছে। হতাশার মধ্যে আমি ঝোঁকের বশে এমন কিছু লিখি, যা লেখা উচিত হয়নি। বুঝতে পেরে পোস্টটি সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে ফেলেছি। পোশাক নিয়ে আমার কোনও কটাক্ষ নেই; হিজাব নিয়ে আমি বরাবরই ইতিবাচক অবস্থানে ছিলাম। কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

 

অধ্যাপকের এই পোস্টের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) পাঁচ দফা দাবি জানায়। তাদের দাবিগুলো হলো—
১. অধ্যাপক আ-আল মামুনকে তার অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এমন বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক আচরণের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে এবং নীতিমালা ঘোষণা করতে হবে।
৪. ভবিষ্যতে যেন কোনও শিক্ষক বা কর্মচারী শিক্ষার্থীর ধর্মীয় বিশ্বাস বা পোশাক নিয়ে কটূক্তি না করতে পারে, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা, সাম্য এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে সেমিনার বা ওরিয়েন্টেশন আয়োজন করতে হবে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, অধ্যাপক মামুন তার বিভিন্ন পোস্টে ছাত্রীদের পোশাক ও ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। তিনি “বোরকা”, “কাঠমোল্লা”, “মদ”, “সেক্সুয়াল রেভল্যুশন” প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এবং এক পোস্টে ক্লাসে টু-কোয়াটার পরে মদের বোতল হাতে আসার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন— যা শিক্ষাঙ্গনের নৈতিক মানের গুরুতর লঙ্ঘন।

রাকসুর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়— যদি প্রশাসন দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারা সাংগঠনিক ক্ষমতায় শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিতভাবে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিরাপদ ও সম্মানজনক থাকে।