কর্মচারী নিয়োগে নতুন নির্দেশনা মাউশির, থাকছে না কমিটির একচেটিয়া ক্ষমতা

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক ছাড়া অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফেরাতে এবং গভর্নিং বডির একচেটিয়া ক্ষমতা কমাতে নতুন নীতিমালা কার্যকর করেছে সরকার। গত সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা এই নীতিমালা বাস্তবায়নে সোমবার (২৭ অক্টোবর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নতুন মোড়

এতদিন বেসরকারি স্কুল ও কলেজের কর্মচারী নিয়োগ মূলত স্থানীয় ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির হাতে ন্যস্ত ছিল, যার ফলে প্রায়ই স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠত। মাউশির সহকারী পরিচালক মো. মাঈন উদ্দিন স্বাক্ষরিত নতুন বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এখন থেকে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ‘নিয়োগ সুপারিশ কমিটি’

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় কর্মচারী নিয়োগের জন্য একটি শক্তিশালী সুপারিশ কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিই লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রস্তুত এবং চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবে।

কমিটির কাঠামো:

  • সভাপতি: সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি)।

  • সদস্যসচিব: জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

  • সদস্যবৃন্দ:

    • জেলার সবচেয়ে পুরোনো সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বা তার প্রতিনিধি।

    • সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের একজন প্রতিনিধি।

    • জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক বা সহকারী পরিচালক।


নিয়োগ সুপারিশ কমিটির গঠন ও কার্যক্রম

নিচে সারণির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নতুন কাঠামোটি তুলে ধরা হলো:

পদের নামপ্রতিনিধির পদমর্যাদাদায়িত্ব ও ভূমিকা
সভাপতিজেলা প্রশাসক (ডিসি)কমিটির সার্বিক নেতৃত্ব ও তদারকি।
সদস্যসচিবজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাপ্রশাসনিক কাজ ও সমন্বয় সাধন।
সদস্য (শিক্ষা)সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ/প্রতিনিধিমেধা যাচাই ও কারিগরি সহায়তা।
সদস্য (বোর্ড)শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিবোর্ডের নীতিমালা নিশ্চিতকরণ।
সদস্য (যুব উন্নয়ন)উপপরিচালক/সহকারী পরিচালকদক্ষতা যাচাই ও কর্মসংস্থান সমন্বয়।
মৌখিক বোর্ডডিসি’র প্রতিনিধি (৯ম গ্রেডের উপরে)সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও চূড়ান্ত মেধা তালিকা।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধার প্রতিফলন ঘটবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি কাজ করায় ম্যানেজিং কমিটির অনিয়মের সুযোগ আর থাকবে না। প্রয়োজনে মৌখিক পরীক্ষার জন্য একাধিক বোর্ড গঠন করা যাবে, তবে প্রতিটি বোর্ডের নেতৃত্বে থাকবেন একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা (৯ম গ্রেড বা তার উপরে)।

প্রভাব ও ফলাফল

এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলে:

  1. স্বজনপ্রীতি রোধ: স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপ বা ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে নিয়োগ বন্ধ হবে।

  2. মেধাবীদের অগ্রাধিকার: লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীরাই কাজ পাবেন।

  3. আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ: নিয়োগ বাণিজ্যের পথ বন্ধ হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই নতুন নীতিমালা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাবে এবং দক্ষ জনবল নিয়োগের পথ প্রশস্ত করবে।