রাজশাহীতে সাপের কামড় বেড়েছে: কারণ ও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ

রাজশাহী অঞ্চলে সাপের কামড়ের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের জন্য এখন বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ সাপের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এই প্রবণতা বিশেষ করে গ্রামীণ ও কৃষি এলাকায় প্রকট, যেখানে মানুষ ঘাসফুস, খোলা মাঠ এবং জঙ্গলি অঞ্চলে কাজ করছেন।

একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন হেফজুল হক নামে এক কৃষক। তিনি চারঘাট বাজারে বলেন, “ভাই, আমাকে চিনতে পারলেন না? আমার গালে কামড় দিয়েছিল রাসেলস ভাইপার।” হেফজুল হক সাপটি মারা ব্যাগে করে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে যান। তিন দিনের চিকিৎসার পর সুস্থ হন। পরে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডাঃ আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবেদকও দেখা করেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আঞ্চলিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এখানে ১,৪৯০ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১১৭ জন এবং ১১ জন বেশি।

তথ্যসংখ্যাপরিবর্তন (গত বছর তুলনায়)
ভর্তি রোগীর সংখ্যা১,৪৯০ জন+১১৭ জন
মৃত্যু৫১ জন+১১ জন

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে:

  1. পরিবেশগত পরিবর্তন: পাহাড়ি ও জলাভূমি এলাকা শুকিয়ে যাওয়ায় সাপের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

  2. মানব ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি: কৃষিকাজ ও বনাঞ্চলের নিকটে মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সাপের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ঘটছে।

  3. সাপের প্রজাতির বৈচিত্র্য: রাসেলস ভাইপার ও অন্যান্য বিষধর প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

  4. প্রাথমিক চিকিৎসার অভাব: গ্রামীণ জনগণ প্রাথমিক চিকিৎসা বা প্রতিষেধক সরবরাহে দেরি করছেন, ফলে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

ডাঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “প্রত্যেক সাপের কামড়ই ঝুঁকিপূর্ণ। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না হলে জীবনহানি ঘটতে পারে। জনগণ সচেতন না হলে সাপের কামড়ের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”

বিশেষজ্ঞরা আরও পরামর্শ দিয়েছেন যে, মানুষকে সাপের আবাসস্থল থেকে দূরে থাকা, আবহাওয়ার পরিবর্তন অনুযায়ী সতর্ক থাকা, এবং বিশেষ করে রাসেলস ভাইপার, করাতী ও অন্যান্য বিষধর সাপের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে গ্রামীণ এলাকায় প্রতিষেধক সরবরাহ এবং সাপ সচেতনতা ক্যাম্পেইন চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহীতে সাপের কামড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির এই প্রবণতা সাধারণ জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্রাথমিক সতর্কতা, দ্রুত চিকিৎসা এবং সচেতনতার মাধ্যমে এ ধরনের দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।