দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবশেষে আজ দেশের মাটিতে ফিরে এসেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ আগমনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ও আবেগের যে স্রোত বইছে, তা দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার এক বাস্তব রূপ। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। বিমানবন্দরে অবতরণের পর থেকেই নিরাপত্তা ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে তাকে সংবর্ধনার প্রধান আয়োজনস্থল অভিমুখে নেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তাদের উড়োজাহাজ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম অবতরণ করে, যেখানে স্বল্প সময়ের বিরতির পর তারা পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে যাত্রার মাধ্যমে তার দেশে ফেরার অধ্যায় শুরু হয়। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের ফেরার আবেগ তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও ব্যক্ত করেন—বাংলাদেশের আকাশে প্রবেশের মুহূর্তে তিনি লেখেন, ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’—যা সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মনে এক ভিন্ন মাত্রার আবেগ জাগায়।
তার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপি রাজধানীর জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে (সাবেক ৩০০ ফিট) এলাকায় আজ একটি বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাত থেকেই লোকজন সমবেত হতে শুরু করে এবং সকালেই পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ব্যানার, পোস্টার, স্লোগান আর শুভেচ্ছাবার্তায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। নেতাকর্মীদের দাবি, শুধু রাজধানী নয়—সারা দেশ থেকেই লাখো মানুষ তাকে একনজর দেখতে সেখানে ছুটে এসেছেন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “দেশবাসী অপেক্ষমাণ—তাকে একনজর দেখার জন্য, দুটি কথা শোনার জন্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫৫ বছরের মধ্যে অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই দিনটি জাতীয় ইতিহাসে এক বিশেষ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
সরকারি সূত্র মতে তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে সরাসরি জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে উপস্থিত হয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবেন। এরপর তিনি হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন এবং তারপর নিজ বাসভবন গুলশানে ফিরে যাবেন।
তার যাত্রাপথের সময়সূচি সংক্ষেপে
| ধাপ | স্থান | সময় (বাংলাদেশ সময়) | উল্লেখযোগ্য ঘটনা |
|---|---|---|---|
| ১ | লন্ডন হিথ্রো থেকে যাত্রা | বুধবার সন্ধ্যা ৬:১৫ (লন্ডন সময়) | দেশে ফেরার টেকঅফ |
| ২ | সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর | বৃহস্পতিবার ৯:৫৫ | প্রথম অবতরণ |
| ৩ | শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর | বৃহস্পতিবার ১১:৪০ | আনুষ্ঠানিক আগমন |
| ৪ | জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে | দুপুরের পর | সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ |
| ৫ | খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ | পরবর্তী ধাপ | হাসপাতালে যাওয়া |
| ৬ | গুলশান বাসায় ফেরত | অনুষ্ঠান শেষে | পারিবারিক অবস্থান |
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রত্যাশা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন অধ্যায় খুলবে ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথরেখা নতুনভাবে সাজানো হবে। লাখো মানুষের আবেগ, অপেক্ষা ও উদ্দীপনায় ভরপুর এই দিনটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
