অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চলতি অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ড দলের পারফরম্যান্স এখন স্রেফ ব্যর্থতার গল্প। প্রথম তিন টেস্টেই হার মেনে মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ‘ছাইদানি’র দখল হারিয়েছে ইংলিশরা। মাঠের এই চরম বিপর্যয়ের মধ্যেই এখন যোগ হয়েছে মাঠের বাইরের বড় এক কেলেঙ্কারি। অভিযোগ উঠেছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টের মাঝের বিরতিতে ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়রা অতিরিক্ত মদ্যপানে লিপ্ত ছিলেন। মাঠের খেলায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর খেলোয়াড়দের এমন অপেশাদার আচরণে ক্ষুব্ধ দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন ইংল্যান্ড দলের পরিচালক রব কি।
পার্থ ও ব্রিসবেনের প্রথম দুই টেস্টে শোচনীয়ভাবে হারের পর ইংল্যান্ড দল কিছুদিনের বিশ্রামের জন্য কুইন্সল্যান্ডের নুসায় অবকাশ যাপনে গিয়েছিল। ব্রিটিশ ও অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, সেই ছুটি মোটেও বিশ্রামের ছিল না। বরং একাধিক খেলোয়াড় সেখানে নিয়মিত এবং মাত্রাধিক মদ্যপান করেছেন। কিছু প্রতিবেদনে এই বিরতিকে একটি ‘স্ট্যাগ ডু’ বা উগ্র ব্যাচেলর পার্টির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অ্যাশেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে যখন দল অস্তিত্ব সংকটে, তখন খেলোয়াড়দের এমন ‘পার্টি মোড’ সাধারণ দর্শকদের মাঝেও তীব্র অসন্তোষ তৈরি করেছে।
মঙ্গলবার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রব কি জানান, এই প্রতিবেদনগুলোর সত্যতা গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করা হবে। তাঁর বক্তব্য ও সিরিজের বর্তমান পরিস্থিতির একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো:
অ্যাশেজ সিরিজের বর্তমান চিত্র ও অভিযোগের সারসংক্ষেপ
| বিষয় | বিস্তারিত তথ্য |
| সিরিজের বর্তমান অবস্থা | ৩-০ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে (অ্যাশেজ জয়)। |
| বিতর্কের সূত্রপাত | কুইন্সল্যান্ডের নুসায় অবকাশ যাপন চলাকালে। |
| মূল অভিযোগ | অতিরিক্ত মদ্যপান এবং পেশাদারিত্বের চরম অভাব। |
| তদন্তের নেতৃত্ব | রব কি (ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পরিচালক)। |
| পরবর্তী লক্ষ্য | মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ‘বক্সিং ডে’ টেস্ট (শুক্রবার)। |
| বোর্ডের অবস্থান | শৃঙ্খলাভঙ্গ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির সম্ভাবনা। |
রব কি তাঁর সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, “সংবাদপত্রের শিরোনাম অনেক সময় বিভ্রান্তিকর হয়। কোথাও কোথাও একে ‘স্ট্যাগ ডু’ বলা হচ্ছে এবং দাবি করা হচ্ছে যে খেলোয়াড়রা টানা ছয় দিন মদ্যপান করেছেন। যদি এটি সত্যি হয়ে থাকে, তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আমাদের আসল ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে হবে। কেবল ছবিতে দু-একজনের হাতে পানীয় দেখেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না। আমাদের পুরো প্রেক্ষাপটটি বুঝতে হবে।”
রব কি আগে থেকেই দলের ভেতরে ‘ড্রিঙ্কিং কালচার’ বা মদ্যপানের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। সিরিজ শুরুর আগেই তিনি খেলোয়াড়দের সতর্ক করে বলেছিলেন, তারা যেন ‘বোকার মতো’ কোনো আচরণ করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “যদি বিরতিটি সত্যিই উচ্ছৃঙ্খল মদ্যপানের আসরে পরিণত হয়ে থাকে, তবে আমাদের কঠোর হতে হবে। আমি এমন অপেশাদার সংস্কৃতি পছন্দ করি না।”
অ্যাশেজের বাকি দুই টেস্টে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন এখন ইংল্যান্ডের সামনে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ঐতিহাসিক ‘বক্সিং ডে’ টেস্টের আগে এই বিতর্ক দলের জন্য এক বড় অস্বস্তি। এখন দেখার বিষয়, মাঠের বাইরের এই অস্থিরতা সামলে জো রুট-বেন স্টোকসরা সম্মান বাঁচানোর লড়াইয়ে কতটুকু সফল হন।
