খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ গেল সাংবাদিক মিলনের

খুলনা নগরীতে আবারও ভয়াবহ সন্ত্রাসী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মোটরসাইকেলে এসে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে ইমদাদুল হক মিলন (৪৫) নামের এক সাংবাদিককে। এই নৃশংস হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন দেবাশীষ বিশ্বাস (৩০) নামে এক পশু চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন শলুয়া বাজার এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে থাকার সময় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সাংবাদিক সমাজে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শলুয়া বাজারের একটি চায়ের দোকানে মিলন, দেবাশীষসহ কয়েকজন পরিচিতজনের সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন। হঠাৎ করে দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন অস্ত্রধারী সেখানে এসে পৌঁছায়। তারা কোনো কথাবার্তা ছাড়াই হঠাৎ গুলি চালাতে শুরু করে। প্রথম গুলিটি লাগে দেবাশীষ বিশ্বাসের বুকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর দুর্বৃত্তরা সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলনকে লক্ষ্য করে মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। পুরো ঘটনাটি ঘটে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে, এরপর হামলাকারীরা দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর স্থানীয়রা সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে এসে আহত দেবাশীষ বিশ্বাস ও মিলনকে উদ্ধার করে দ্রুত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমদাদুল হক মিলনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দেবাশীষ বিশ্বাসকে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে এবং তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

খুলনা মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) সুদর্শন কুমার রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ ও জড়িতদের শনাক্ত করতে একাধিক তদন্ত দল মাঠে নামানো হয়েছে। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দ্রুতই হত্যার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

নিহত ইমদাদুল হক মিলন খুলনার ‘বর্তমান সময়’ নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি শলুয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে তিনি ‘দৈনিক প্রবাহ’ নামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। এলাকায় তিনি একজন সৎ, সাহসী ও সামাজিকভাবে সক্রিয় সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

নিহতের চাচা মো. জামাল শরীফ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে মিলনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। দ্রুত হাসপাতালে আনলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। তিনি বলেন, মিলনের কোনো শত্রু ছিল বলে তারা জানতেন না। তিনি শলুয়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

অন্যদিকে আহত দেবাশীষ বিশ্বাসের ভাই সঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, তার ভাই মূলত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কেন বা কারা তাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, তা তারা বুঝতে পারছেন না।

আড়ংঘাটা থানার ওসি শাহজাহান আহমেদ জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে খুলনায় আবারও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।