বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির ভারত সফর শেষ হলেও তার রেশ এখনো কাটেনি। এই সফর যেমন লাখো ভক্তের স্বপ্ন পূরণের উপলক্ষ হয়ে উঠেছিল, তেমনি কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে জন্ম দিয়েছে তীব্র বিতর্কের। বিশেষ করে কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর ও হতাশার ঘটনা ভারতের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে আয়োজন, প্রত্যাশা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন, কলকাতার এই বিশৃঙ্খলার জন্য লিওনেল মেসিই কি মূলত দায়ী নন?
১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মেসির সফরের সূচনা থেকেই পরিস্থিতি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। বহু ভক্ত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছিলেন শুধুমাত্র প্রিয় তারকাকে এক ঝলক দেখার আশায়। সূচি অনুযায়ী মেসির মাঠে নেমে পুরো স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটি হয়নি। প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার এই ফারাক থেকেই জন্ম নেয় ক্ষোভ। অভিযোগ ওঠে, টিকিট কেটে আসা দর্শকদের বড় একটি অংশ মেসিকে ঠিকভাবে দেখতেই পাননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে একপর্যায়ে কিছু দর্শক চেয়ার ও বোতল ছোড়েন, স্টেডিয়ামের ভেতরে ভাঙচুরও হয়।
এই ঘটনা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে কলাম লিখে সুনীল গাভাস্কার স্পষ্ট ভাষায় দায় নির্ধারণের প্রশ্ন তুলেছেন। তার মতে, মেসি ঘোষিত সময়ের তুলনায় অনেক কম সময় স্টেডিয়ামে ছিলেন, যা দর্শকদের হতাশ করেছে। গাভাস্কার লিখেছেন, যদি চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় মাঠে উপস্থিত থাকার কথা থাকে এবং সেটি পূরণ না হয়, তবে দায় এড়ানো যায় না। তার দৃষ্টিতে, দর্শকের আবেগ ও অর্থের মূল্য দেওয়া উচিত ছিল।
গাভাস্কার আরও বলেন, মেসির নিরাপত্তা নিয়ে বড় কোনো হুমকির বিষয় সামনে আসেনি। সে ক্ষেত্রে মেসি চাইলে শুধু মাঠে হাঁটার বদলে একটি পেনাল্টি কিক নেওয়া বা ছোট কোনো ফুটবল কার্যক্রমে অংশ নিতে পারতেন। এতে ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ হতো এবং ভিআইপি ভিড়ও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারত।
কলকাতার আয়োজকদের একতরফাভাবে দোষারোপ করার আগে সব দিক খতিয়ে দেখা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গাভাস্কারের যুক্তি, হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও দিল্লিতে মেসির সফর নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে, কারণ সেখানে প্রতিশ্রুতিগুলো ঠিকভাবে রক্ষা করা হয়েছিল।
ঘটনার দিন যুবভারতী স্টেডিয়ামে মেসি ছিলেন মাত্র ২২ মিনিট। রাজনীতিবিদ, ভিআইপি, নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তাদের ভিড়ে তিনি প্রায় আড়ালেই পড়ে যান। পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে উঠলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তাকে স্টেডিয়াম ছাড়তে হয়।
সব মিলিয়ে মেসির ভারত সফর স্মরণীয় হলেও কলকাতার অভিজ্ঞতা রেখে গেছে ক্ষোভ, প্রশ্ন আর বিতর্ক। আর সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে গাভাস্কারের মন্তব্য, যা দায়িত্ব ও প্রত্যাশার ভারসাম্য নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
