চলতি অ্যাশেজ সিরিজে টানা দুই টেস্ট হেরে বেশ চাপে পড়েছে ইংল্যান্ড। পার্থ ও ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে পরাজয়ের পর সিরিজের তৃতীয় টেস্টকে ‘করো না মরো’ ম্যাচ হিসেবেই দেখছে সফরকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাডিলেড টেস্ট সামনে রেখে দলে একমাত্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ছিটকে গেছেন পেসার গাস অ্যাটকিনসন, আর তাঁর জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার লম্বা পেসার জশ টাং।
এবারের অ্যাশেজে প্রথম দুই টেস্টে ইংল্যান্ড দলে ছিলেন অ্যাটকিনসন। তবে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। চার ইনিংসে ৫৪ ওভার বোলিং করে তিনি খরচ করেছেন ২৩৬ রান, উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৩টি। ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স। তাই অ্যাডিলেডের তৃতীয় টেস্ট সামনে রেখে অ্যাটকিনসনের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। শেষ পর্যন্ত সেই প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক উত্তর দিয়েছে ইসিবি—একাদশে রাখা হয়নি তাঁকে।
অ্যাডিলেডের উইকেট এবারের সিরিজে সবচেয়ে স্পিনবান্ধব হিসেবে পরিচিত। স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ড দলে অফ স্পিনার শোয়েব বশিরের না থাকা অনেককেই অবাক করতে পারে। পার্থ ও ব্রিসবেনে কন্ডিশনের কারণে তাঁকে খেলানো হয়নি, তবে অ্যাডিলেডে স্পিন সহায়ক উইকেট থাকায় তাঁর ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছিল। অথচ ইংল্যান্ড সেই পথে হাঁটেনি। বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের অভিজ্ঞ অফ স্পিনার নাথান লায়নকে দলে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছে। অ্যাডিলেডে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৬৩ উইকেট লায়নের দখলে, ফলে তাঁর খেলা প্রায় নিশ্চিত বলেই ধরা হচ্ছে।
তাহলে প্রশ্ন উঠছে—অস্ট্রেলিয়া যেখানে লায়নের ওপর ভরসা রাখছে, ইংল্যান্ড সেখানে কেন বশিরকে বাইরে রাখল? এর পেছনে মূলত কৌশলগত চিন্তাই কাজ করেছে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এর আগেও দেখেছেন, অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে অতিরিক্ত বাউন্স আদায়ে লম্বা পেসাররা কতটা কার্যকর হতে পারেন। জশ টাংয়ের উচ্চতা ও ‘হাই রিলিজ পয়েন্ট’ এই উইকেটে বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে—এমন বিশ্বাস থেকেই তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে টেস্ট অভিষেকের পর থেকেই টাংয়ের উইকেট নেওয়ার সামর্থ্যে মুগ্ধ ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট। এখন পর্যন্ত ৬ টেস্টে তিনি নিয়েছেন ৩১ উইকেট, গড় প্রায় ৩০। গত জুলাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে পাঁচ টেস্টের সিরিজে তিন ম্যাচ খেলে ১৯ উইকেট নিয়ে ছিলেন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। সেই সিরিজেই আঙুল ভেঙে চোট পান শোয়েব বশির, এরপর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হয়নি তাঁর।
ইতোমধ্যে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ডের সামনে সিরিজে ফেরার শেষ বড় সুযোগ এই অ্যাডিলেড টেস্ট। বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে শুরু হতে যাওয়া ম্যাচে জশ টাংয়ের গতিময় বোলিং ইংল্যান্ডকে নতুন আশার আলো দেখাতে পারে কি না, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।
নির্বাচিত বোলারদের পারফরম্যান্স (সংক্ষেপে)
| খেলোয়াড় | ম্যাচ | ওভার | রান | উইকেট |
|---|---|---|---|---|
| গাস অ্যাটকিনসন | ২ টেস্ট | ৫৪ | ২৩৬ | ৩ |
| জশ টাং | ৬ টেস্ট (ক্যারিয়ার) | — | — | ৩১ |
| নাথান লায়ন | অ্যাডিলেড টেস্ট | — | — | ৬৩ উইকেট (মাঠে) |
সব মিলিয়ে, স্পিনবান্ধব অ্যাডিলেডেও লম্বা পেসারের ওপর আস্থা রেখে ভিন্ন পথেই হাঁটল ইংল্যান্ড। এখন দেখার বিষয়, এই কৌশল তাদের সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে কতটা কার্যকর হয়।
