পুরানা পল্টনে ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদীকে গুলি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের এমপি পদপ্রার্থী শরিফ ওসমান হাদীকে রাজধানীর পুরানা পল্টনে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর দুপুর প্রায় ২টার দিকে ব্যস্ত এই এলাকায় হামলার ঘটনাটি ঘটে, যা মুহূর্তেই জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা যায়, অজ্ঞাতপরিচয় একদল বন্দুকধারী মোটরসাইকেলযোগে সেখানে উপস্থিত হয়ে আকস্মিকভাবে তার ওপর গুলি চালায়। হামলার সময় তিনি জুমার নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরছিলেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ার পর আশপাশের সাধারণ মানুষ দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে তিনি জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন এবং চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

এই হামলার প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে গত ১৩ নভেম্বরের ঘটনা, যখন ওসমান হাদী অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি নিয়মিত বিদেশি নম্বর থেকে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিভিন্ন বিদেশি নম্বর থেকে ফোনকল এবং টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে তাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। এসব ঘটনার কারণে তিনি এবং তার পরিবার ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছিলেন।

সেই রাতেই তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে তার ফোনে কল এবং টেক্সট আসে, যা তার ভাষ্যমতে লীগের খুনিরা পাঠাচ্ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, এসব বার্তায় বলা হয় যে তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হবে, তার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হবে এবং শেষ পর্যন্ত তাকেও হত্যা করা হবে—এমন ভয়াবহ হুমকিও দেওয়া হয়।

ওই স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ১৪০০ শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে শুধু তার বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হবে না, প্রয়োজনে তাকেও আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। তবে সরাসরি হুমকির মুখেও তিনি জানিয়ে দেন, ইনসাফ ও ন্যায়ের লড়াই থেকে তিনি এক চুলও পিছপা হবেন না।

হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার সমর্থক, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন। এখন পর্যন্ত চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, হামলার কারণ এবং সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করতে তারা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে, এবং সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।