চলে গেলেন রবীন্দ্রসংগীতের কিংবদন্তি পাপিয়া সারোয়ার

বাংলার সংগীতচর্চার আকাশে পাপিয়া সারোয়ার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি শুধুমাত্র রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী নন, বরং একজন শিল্পপ্রেমিক এবং অনন্য শিল্প ব্যক্তিত্ব। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে নতুনভাবে জীবন্ত করে তুলত।

পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম ১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর বরিশালে। শৈশব থেকেই রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিল। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন ছায়ানটে, পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৬৭ সালে বেতার ও টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির আকাশে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো উদ্ভাসিত হন। ১৯৭৩ সালে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, যা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম কৃতিত্ব হিসেবে রেকর্ডে স্থান পায়।

তার জনপ্রিয়তা চূড়ান্ত হয় “নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম” গানটির মাধ্যমে। গানটি তাকে দেশের প্রতিটি ঘরে পরিচিতি এনে দেয় এবং তিনি হয়ে ওঠেন প্রজন্মের কাছে অমর।

পাপিয়া সারোয়ারের অবদান শুধু কণ্ঠে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি রবীন্দ্রসংগীত চর্চায় অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন এবং দেশে-বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ প্রদান করেছে এবং তাকে সম্মানিত ফেলোশিপে ভূষিত করেছে।

তিনি ওয়াহিদুল হক, ড. সনজীদা খাতুন, আতিকুল ইসলাম, জাহেদুর রহিমের কাছে গুরুশ্রেণী থেকে শিল্প চর্চা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। তার পরিবার—স্বামী সারোয়ার আলম এবং দুই কন্যা জারা ও জিশা—ও প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘ অসুস্থতার পর ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলার রাবীন্দ্রিক সংস্কৃতির প্রতি তার অবদান চিরস্মরণীয়।