চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রবাসী আয় সংগ্রহের খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে এবং এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটি এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাসী আয় সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। শীর্ষ স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসী আয় সংগ্রহের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি দেখিয়েছে কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটির এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে সারাদেশে বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক, করোনাকালেও নিরবচ্ছিন্ন সেবা এবং গ্রাহকসেবার মান উন্নয়ন। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির ব্যয় পরিশোধের দায়িত্ব পাওয়ায় ব্যাংকটিতে বৈদেশিক মুদ্রার বিপুল চাহিদা তৈরি হয়, যা পূরণের প্রধান উৎস হয়ে ওঠে প্রবাসী আয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর—এই ১১ মাসে দেশে আসা মোট প্রবাসী আয় দুই হাজার নয়শ আটান্ন কোটি ডলার। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংক সংগ্রহ করেছে দুই হাজার তেষট্টি কোটি ডলার, যা মোট প্রবাসী আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ। তালিকায় শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক (৫৫৩ কোটি ডলার), এরপর কৃষি ব্যাংক (২৭৭ কোটি ডলার) এবং অগ্রণী ব্যাংক (২৬৫ কোটি ডলার)। তাদের পেছনে রয়েছে জনতা ব্যাংক (১৯৭), ব্র্যাক ব্যাংক (১৯১), ট্রাস্ট ব্যাংক (১৬০) এবং সোনালী ব্যাংক (১৪৫) কোটি ডলার। রূপালী, সিটি ও পূবালী সংগ্রহ করেছে যথাক্রমে ১১০, ৮৪ ও ৭৯ কোটি ডলার।
কৃষি ব্যাংকের রয়েছে এক হাজার আটত্রিশটি শাখা ও পাঁচটি উপশাখা। সারাদেশে এমন বিস্তৃত নেটওয়ার্ক অন্য কোনো ব্যাংকের নেই। আগে অন্যান্য ব্যাংক এবং মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রবাসী আয় বিতরণ করত। বিনিময়ে কৃষি ব্যাংক সামান্য মাশুল পেত। ২০১৮ সালে আলী হোসেন প্রধানিয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বিদেশি অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করে নেটওয়ার্কটিকে আরও ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর্থিক সেবা জোরদার করতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়, যাতে তারা তাদের সংগ্রহ করা অর্থ সরাসরি যেকোনো শাখায় জমা দিতে পারে। করোনাকালীন সময়ে ব্যাংকটি সব শাখা খোলা রেখে প্রবাসী আয় বিতরণ অব্যাহত রাখে, যা গ্রাহকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে সাব–এজেন্ট হিসেবে যুক্ত করা হয়, ফলে সারা দেশে একযোগে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়।
ডলার–সংকটের সময়ে সরকারের পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার দায়িত্ব পাওয়ায় ব্যাংকটির বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে প্রতি মাসে ২০–২৫ কোটি ডলার পরিশোধ করছে ব্যাংকটি। গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা, আর চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
প্রবাসীদের জন্য চালু বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমেও জমা হয়েছে প্রায় ২২০ কোটি টাকা। যদিও কৃষিঋণের কারণে ব্যাংকটি ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ছয় হাজার পাঁচশ তেরো কোটি টাকা লোকসান করে, তবুও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসাকে ঘিরেই লোকসান কিছুটা কমে আসছে।
কৃষি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি আয় পাচ্ছে মালয়েশিয়ার মার্চেন্ট্রেড থেকে। এরপর রয়েছে রিয়া মানি, ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ, সিবিএল মানি, এনবিএল মানি, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, এনইসি মানি, হোম রেমিট এবং ইজেড রেমিট।
ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ও হিসাব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত হাজারের বেশি শাখাই তাদের প্রধান শক্তি। এখন গ্রাহকেরা সরাসরি নিজের হিসাবে টাকা পাচ্ছেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টায় নিষ্পত্তি হচ্ছে।
এজে
