শুক্রবার সকালটা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীর মাধবদীকে কেন্দ্র করে যখন ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে চারদিক কেঁপে ওঠে, তখন মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় পাঁচটি পরিবার। সদর, পলাশ ও শিবপুর—তিন উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যু পুরো এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছে শোকের ছায়া।
সদরের গাবতলী গ্রামের দেলোয়ার হোসেন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথায় আঘাত পান। পাশের বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছিটকে পড়া নির্মাণসামগ্রী তাঁর বাড়ির ছাদ ভেদ করে পড়ে। দেলোয়ার তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ধসে পড়া ছাদের অংশ তাঁদের ওপর এসে পড়ে। আহত তিনজনকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলেও শিশুপুত্র ওমর ঢাকায় যাওয়ার পথে মারা যায়। বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলোয়ারও। তাঁর মেয়ে তাসফিয়া এখনও হাসপাতালে।
পলাশের চরসিন্দুর ইউনিয়নে কাজম আলী ভূঁইয়া নামের ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ নাতি-নাতনিকে নিয়ে ঘরের ভেতর ছিলেন। ভূমিকম্পে ঘর দুলতেই শিশুরা দৌড়ে বাইরে বের হয়ে যায়। কিন্তু তিনি বের হওয়ার আগেই মাটির দেয়াল তাঁর ওপর ধসে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ডাঙ্গা ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় ৬৫ বছর বয়সী নাসির উদ্দীন পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে আতঙ্কিত হয়ে বুকে হাত দিয়ে লুটিয়ে পড়েন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
শিবপুরের আজকিতলায় ৩৫ বছর বয়সী ফোরকান মিয়া ছিলেন গাছের ওপরে। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং সন্ধ্যায় হাসপাতালে মারা যান।
এই মৃত্যুগুলো দেখিয়েছে, দুর্বল নির্মাণকাঠামো, অপ্রস্তুতি ও ভয় মিলেমিশে কীভাবে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পকেও প্রাণঘাতী করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবন নিরাপত্তা, মাটির ঘরের ঝুঁকি এবং জনগণের ভূমিকম্প–সতর্কতা বিষয়ে সচেতনতা না বাড়লে ভবিষ্যতে এমন ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।
