বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে টানা দরপতন যেন থামছেই না। ডিএসই ও সিএসই—দু’টি বাজারেই প্রতিদিন লেনদেন শুরু হওয়ার পরপরই সূচক নিচের দিকে নামতে থাকে। গত সপ্তাহে দুই বাজারে সম্মিলিতভাবে বাজারমূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা, যা মধ্যম আকারের একটি আর্থিক খাতের জন্য বড় আঘাত। ক্রমাগত ক্ষতির জেরে ক্ষুব্ধ ছোট বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন।
Table of Contents
শুরুতে আশাবাদ, পরে মন্থর পতন
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাজারে এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ডিএসইএক্স এক দিনে ২০০ পয়েন্ট বাড়ে এবং পরবর্তী কয়েকদিনে ৮০০ পয়েন্ট বৃদ্ধির রেকর্ড করে। চার কার্যদিবসে সূচক ৬ হাজার পয়েন্ট পার করে, আর লেনদেন ২ হাজার কোটির ওপরে উঠে যায়।
কিন্তু এই উত্থান ছিল ক্ষণস্থায়ী। কয়েক মাসের মধ্যেই সূচক ১,২০০ পয়েন্ট কমে ৪,৭৮৫–এ নেমে আসে এবং লেনদেন কমতে কমতে ২৫০ কোটি টাকায় পৌঁছায়। মাঝে মাঝে সামান্য উত্থান দেখা গেলেও বড় ছবি থেকে বোঝা যায়—বাজার স্থায়ীভাবে দুর্বল অবস্থায় রয়ে গেছে।
কেন এমন পতন? তিনটি মূল কারণ
বাজার বিশ্লেষকদের মতে বাজারের এই অস্থিরতার মূলে রয়েছে—
১. জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা
নির্বাচন সময়মতো হবে কি না—এই প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তগ্রহণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।
২. নতুন মার্জিন ঋণ নীতিমালার জটিলতা
নতুন বিধিমালা বিনিয়োগকারীদের ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনা কঠিন করেছে। ফলে বাজারে লিকুইডিটি কমেছে।
৩. পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার শূন্য মূল্য ঘোষণা ও লেনদেন স্থগিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের ইক্যুইটির মান শূন্য ঘোষণা করলে বাজারে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। ৬ নভেম্বর গিয়ে এসব ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন সম্পূর্ণ স্থগিত হয়।
এই সিদ্ধান্ত ছোট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এতটাই আতঙ্ক সৃষ্টি করে যে, তাঁরা ডিএসই ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন এবং পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাওয়ের আন্দোলন ঘোষণা করেন।
যদিও অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন—গভর্নরের ঘোষণা চূড়ান্ত নয় এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় থাকবে।
বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতা
অক্টোবরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্রয়ের চেয়ে বিক্রিই বেশি করেছেন। ৩৪টি কোম্পানি থেকে বিদেশি শেয়ার হ্রাস পেয়েছে—মূল্য ১৬৯ কোটি টাকা।
অক্টোবর মাসে ডিএসইতে ৩৩০টির বেশি কোম্পানির দর কমেছে এবং সূচক হারিয়েছে ২৯৩ পয়েন্ট।
রোববারের বাজার: ক্ষুদ্র উত্থান, বড় চিত্রে পতনের ধারা
রোববার ডিএসইএক্স ২৯.৪৬ পয়েন্ট বেড়ে ৪,৭৩২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ২৩৬ কোম্পানির দর বাড়লেও লেনদেন কমে ২৯৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
সিএসইতে টানা ১১ কার্যদিবস ধরে সূচক পড়ছে—সিএএসপিআই আজ আরও ৭৪ পয়েন্ট কমেছে।
“আত্মবিশ্বাসের সংকট”—বাজার অংশীজনের দাবি
ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলামের মতে, ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া বাজারে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন আরও ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানি হয়তো অবসায়ন বা একীভূত হতে পারে। এই ভয় থেকে অনেকে শেয়ার বিক্রি করছেন। ফলে বাজারজুড়ে নেতিবাচক চাপ তৈরি হচ্ছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা মিলে বড় বিনিয়োগকারীরাও নতুন করে বাজারে ঝুঁকি নিতে সাহস পাচ্ছেন না।
