ইসলামের পবিত্রতম স্থান মক্কার মসজিদুল হারামে এক ব্যক্তির আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে মুসলিম বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) কাবা শরীফ প্রদক্ষিণের জন্য নির্মিত বহুতল অবকাঠামোর ওপরের স্তর থেকে নিচে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি। তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্রুত, সমন্বিত ও প্রশিক্ষিত হস্তক্ষেপে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়। তবে এই উদ্ধার অভিযানে দায়িত্বে থাকা এক নিরাপত্তারক্ষী আহত হন।
সৌদি প্রেস এজেন্সি এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সিয়াসাত জানায়, ঘটনার সময় মসজিদুল হারামে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। এমন সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে হঠাৎ এই ঘটনা ঘটায় সাময়িক উদ্বেগ তৈরি হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। দায়িত্বরত সদস্যরা প্রথমে ওই ব্যক্তিকে ঘিরে ফেলেন এবং একই সঙ্গে আশপাশের মুসল্লিদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেন, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে।
সৌদি আরবের জননিরাপত্তা বিষয়ক অধিদপ্তর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করে জানায়, হারাম শরীফে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নির্ধারিত নিরাপত্তা প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, সার্বক্ষণিক নজরদারি, উচ্চমাত্রার প্রযুক্তি ব্যবহার এবং প্রশিক্ষিত বিশেষ নিরাপত্তা ইউনিট থাকার কারণেই এমন জটিল পরিস্থিতিও দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি ওপরের অংশ থেকে নিচে ঝাঁপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাকে থামাতে একাধিক নিরাপত্তা সদস্য দ্রুত এগিয়ে যান। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে একজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হন। পরে আহত নিরাপত্তাকর্মী ও আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কাবা শরীফের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ বাহিনী জানায়, বর্তমানে উভয়েই চিকিৎসাধীন এবং তাদের শারীরিক অবস্থার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে। একই সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
মক্কা অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তির পরিচয়, জাতীয়তা কিংবা মানসিক অবস্থার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারাম বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ও সংবেদনশীল ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর একটি। লাখো মুসল্লির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে সর্বাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ক্যামেরা এবং বিশেষায়িত জরুরি ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে। তবুও অতীতেও বিচ্ছিন্নভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে এক সৌদি নাগরিক সেখানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। ২০১৮ সালে হারাম চত্বরে আত্মহত্যা সংশ্লিষ্ট একাধিক ঘটনা নথিভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এক ব্যক্তি ওপরের অংশ থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ হারান।
এই সাম্প্রতিক ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও নিরাপদ স্থানেও মানুষের মানসিক সংকট ও বিপর্যয়ের বাস্তবতা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
