জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা, আর্থিক বৈষম্য কমানো এবং মেধা বিকাশে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ‘বিশেষ বৃত্তি নীতিমালা-২০২৫’ অনুমোদন করেছে, যা আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই কার্যকর হবে। এ উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থসামাজিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে জানানো হয় যে, গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০৪তম সভায় নীতিমালা অনুমোদিত হয়। এর মাধ্যমে বহুদিন ধরে শিক্ষার্থীদের দাবি থাকা আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে টানা পাঁচটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির আওতায় আসবেন। অর্থাৎ স্নাতকের চারটি বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের একটি বর্ষ— সব মিলিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদেরই এই সুবিধা দেওয়া হবে। বৃত্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে:
(১) আর্থিক অসচ্ছলতা, (২) মেধা, (৩) শ্রেণি-উপস্থিতি, (৪) ফলাফল।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাখ্যায় জানায়, এ মানদণ্ড নির্ধারণের উদ্দেশ্য হলো—সত্যিকার অর্থেই আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন এমন মেধাবী শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে যেতে সুযোগ করে দেওয়া।
অন্যদিকে কিছু সীমাবদ্ধতাও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট পাওয়া, পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আরামদায়ক পরিবেশে থাকা, পূর্বে শৃঙ্খলাভঙ্গ, পুনর্ভর্তি হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বৃত্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। প্রশাসনের মতে, এই বিধানগুলো ন্যায্যতা নিশ্চিত করতেই যুক্ত করা হয়েছে।
বিভাগীয় কমিটির প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে কেন্দ্রীয় বিশেষ বৃত্তি কমিটি উপাচার্যের অনুমোদনের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করবে। বৃত্তির অর্থ শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হবে—যা প্রক্রিয়াটিকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে তুলবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সরকারি বরাদ্দের ওপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী এ বৃত্তির আওতায় আসার সুযোগ পাবেন। ফলে বৃহৎ একটি অংশ সরাসরি উপকৃত হবে।
নীতিমালার কার্যকারিতা নিয়ে কিছু তথ্যগত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন জানান, “বিজ্ঞপ্তিতে টাইপিং-জনিত একটি ভুল ছিল; নীতিমালা কার্যকর হবে ১ জুলাই ২০২৫ থেকে, ২০২৬ নয়।” তার এ ব্যাখ্যায় শিক্ষার্থীদের সংশয় কেটে যায়।
শিক্ষাবিদদের মতে, এ নীতিমালা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। কারণ এটি শুধু মেধাবীদের উৎসাহিত করবে না—বরং আর্থিক সমস্যার কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদেরও একটি নতুন সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
