বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা এবং সঞ্চয়াভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম এখন প্রায় ২৬,৪৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ৪.৮ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারী, এবং মোট জমার পরিমাণ প্রায় ২১৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও দেশে ৪ লাখের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তবুও স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়াভ্যাস গড়ে তোলা ও আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই বছরের মার্চ থেকে সকল ব্যাংক শাখাকে অন্তত একটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত আর্থিক শিক্ষা সেশন আয়োজন, শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলা এবং লেনদেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতি শাখা তার কার্যক্রমের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য প্রতি ত্রৈমাসিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্ট করতে বাধ্য।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের ৫২.৭৪% গ্রামীণ অঞ্চলে এবং ৪৭.২৬% শহুরে এলাকায় খোলা হয়েছে। রাজধানী ও অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শহুরে শাখার আওতায় আসে। শিক্ষার্থীদের লিঙ্গভিত্তিক বিতরণ প্রায় সমান, যেখানে ৫০.৮১% ছেলে এবং ৪৯.১৯% মেয়ে অংশগ্রহণ করছে। দেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টি সক্রিয়ভাবে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাধারণ সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে রূপান্তরিত হয়, যখন তারা ১৮ বছর বয়সে পৌঁছায়। এখন পর্যন্ত ১.১৮৭ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট এইভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতি শাখাকে এই বছর অন্তত ৩০০টি নতুন শিক্ষার্থী অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসেই ১০০টি অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্য নির্ধারিত।
২০১০ সালের আগে কেবল ১৮ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারতেন। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে এখন শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি এবং ১০০ টাকার প্রাথমিক জমা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য অবশ্য অভিভাবকের অনুমতি আবশ্যক।
এটি একটি সারাদেশে বিস্তৃত উদ্যোগ, যা শিক্ষার্থীদের আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সঞ্চয়াভ্যাস উন্নয়ন এবং দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি তাদেরকে ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে স্বাধীন ও সুরক্ষিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা সজ্জিত করছে।
