সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকায় এক রুদ্ধশ্বাস অভিযানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত অত্যন্ত শক্তিশালী ২৪টি ইলেকট্রিক বিস্ফোরক ডেটোনেটর জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোরে বিজিবির সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের চারাগাঁও বিওপির একটি বিশেষ টহল দল চারাগাঁও সীমান্তের মাইজহাটি এলাকায় এই অভিযানটি সফলভাবে পরিচালনা করে। ধারণা করা হচ্ছে, শীতের ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়ে চোরাকারবারিরা এসব বিপজ্জনক বিস্ফোরক দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে পাচার করে এনেছিল।
বিজিবি জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে যে, চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে একটি বড় ধরনের বিস্ফোরক চালান পাচারের চেষ্টা চলছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবির একটি দল মাইজহাটি এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে কিছুটা ভেতরে নির্জন স্থানে পলিথিনে মোড়ানো এবং গাছের ডালপালা ও ঝোপঝাড় দিয়ে ঢেকে রাখা একটি প্যাকেট পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্যাকেটটি খুলে দেখা যায় তাতে সুকৌশলে লুকানো রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ২৪টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর। উদ্ধারকৃত এই সরঞ্জামগুলো মূলত উন্নত মানের ইমপ্রুভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED) বা দূরনিয়ন্ত্রিত বোমা তৈরিতে ট্রিগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অভিযানের বিস্তারিত এবং বিস্ফোরকের ধরন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:
উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক ও বিজিবির অভিযান সংক্রান্ত তথ্য
| বিষয়ের বিবরণ | বিস্তারিত তথ্য ও পর্যবেক্ষণ |
| অভিযান পরিচালনাকারী দল | চারাগাঁও বিওপি, ২৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবি। |
| উদ্ধারকৃত স্থানের নাম | মাইজহাটি এলাকা, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ। |
| জব্দকৃত বস্তুর পরিমাণ | ২৪টি শক্তিশালী ইলেকট্রিক ডেটোনেটর। |
| বিস্ফোরকের সক্ষমতা | উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আইইডি (IED) তৈরিতে সক্ষম। |
| পাচারের কৌশল | পলিথিন ও গাছের ডালপালায় লুকানো পরিত্যক্ত অবস্থায়। |
| সম্ভাব্য লক্ষ্য | নাশকতামূলক হামলা ও দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি। |
| নিরাপত্তা পদক্ষেপ | সীমান্ত এলাকায় বিজিবির কঠোর নজরদারি ও তল্লাশি। |
বিজিবির সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির এই অভিযানের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করেছেন। তিনি জানান, জব্দকৃত ইলেকট্রিক ডেটোনেটরগুলো অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার অধিকারী। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন জাতীয় বিভিন্ন ইভেন্ট বা জনবহুল স্থানে বড় ধরনের কোনো নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যে একটি অসাধু চক্র এই বিস্ফোরকগুলো সীমান্ত দিয়ে পাচার করে আনছিল। তবে বিজিবির অতন্দ্র প্রহরীদের তৎপরতায় পাচারকারীরা মালপত্র ফেলেই পালিয়ে যায়।
তিনি আরও যোগ করেন যে, বর্তমানে শীতকালীন বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে চোরাকারবারিরা মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচারের চেষ্টা বাড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চারাগাঁওসহ সুনামগঞ্জের সব সীমান্তে নিরাপত্তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত ডেটোনেটরগুলো বর্তমানে বিজিবির বিশেষ হেফাজতে রয়েছে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এই চক্রের মূল হোতাদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বিজিবির এই সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
