সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশে অঘোষিত হাই অ্যালার্ট জারি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন—কর্তব্যরত পুলিশ বা সাধারণ মানুষের ওপর ককটেল নিক্ষেপ, আগুন কিংবা সহিংসতা দেখা দিলে হামলাকারীদের লক্ষ্য করে ‘গুলির নির্দেশনা’ দেয়া হয়েছে। তার ভাষায়, “বাসে আগুন দিলে কিংবা মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে সরাসরি অ্যাকশন নিতে বলা হয়েছে।”
Table of Contents
নাশকতা রোধে গোয়েন্দা নজরদারি ও গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার
পুলিশ জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্ভাব্য নাশকতা রোধে টহল, চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঝটিকা মিছিল, ককটেল হামলা বা আগুন সন্ত্রাস যাতে সংগঠিত হতে না পারে—সে বিষয়ে সব অপারেশনাল ইউনিটকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল–কলেজে নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে অনলাইন–ক্লাস চালুর নির্দেশনাও এসেছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে রায়কে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্নভাবে ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে আগুন, সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটছে। জুরাইন, কাওরান বাজার, হাতিরঝিল, আগারগাঁও, বিমানবন্দর রেলস্টেশনসহ ঢাকার একাধিক এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিভিন্ন জেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা, বাজার, স্মৃতিস্তম্ভ, কাভার্ডভ্যান ও বাসে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও অন্যান্য জেলায় রাতের আঁধারে গাছ কেটে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির নেতাকর্মীরা—এ দাবি করেছে পুলিশ।
সেনা মোতায়েন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি
রায়ের দিন ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা মোতায়েনের অনুরোধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে সেনা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে।
রাজনৈতিক উত্তাপ: বিএনপি–জামায়াতের মাঠে থাকার ঘোষণা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন—রায়কে সামনে রেখে দেশে অস্থিরতা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, “একটি মহল নৈরাজ্যের পাঁয়তারা করছে, তাই জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
অন্যদিকে কয়েকটি সংগঠন আজ আওয়ামী লীগের “অগ্নিসন্ত্রাসের” বিরুদ্ধে জাতীয় পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। শাহবাগে ‘জনতার আদালতে’ শেখ হাসিনার প্রতীকী ফাঁসি প্রদর্শন এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতীকী কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে ‘জাগ্রত জুলাই’।
বিস্তৃত গ্রেপ্তার অভিযান
কুমিল্লায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৪৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল সংগঠনের অভিযোগে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, এসব অভিযানে তাদের কাছ থেকে ব্যানার, লাঠি, গ্যাস লাইটারসহ নাশকতায় ব্যবহৃত সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা
পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—
সারাদেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে,
সংবেদনশীল পয়েন্টে বাড়তি নজরদারি চলছে,
চেকপোস্টে কড়া তল্লাশি করা হচ্ছে,
কোনো ধরনের উস্কানি বা নাশকতা সৃষ্টি করলে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি—জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
