প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ এখনো জারি হয়নি, ফলে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে জমায়েত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে মিরপুর সড়ক অবরোধ করেন। দুই ঘণ্টা ধরে এই অবরোধে রাজধানীর উত্তরাংশে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পরে দুপুরে ঢাকা কলেজের সামনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
নতুন কর্মসূচিতে কী আছে?
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুর রহমান জানান, তারা আগামী শনিবার পর্যন্ত সময় দিচ্ছেন। সরকার এই সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ প্রকাশ না করলে রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে শিক্ষা ভবনের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে। তিনি বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে অধিকারবঞ্চিত। সেশনজট থেকে শুরু করে ডিগ্রি সমমানের প্রশ্ন—সব কিছুই অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছে। দ্রুত অধ্যাদেশ জারি না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে।”
শিক্ষার্থীরা যে কারণে ক্ষুব্ধ:
সাত কলেজ দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। কিন্তু DU–র অধিভুক্তি ব্যবস্থায় বারবার প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিলে ২০২৩ সালে সরকার এই সাত কলেজকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নাম ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ (Dhaka Central University)।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূলধারার কাজ—অধ্যাদেশ প্রণয়ন, সিনেট–সিন্ডিকেট কাঠামো নির্ধারণ, ক্যাম্পাস গঠন—এসবই দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন তারা আবারও সেশনজটে পড়বে।
ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি:
সকালে ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হওয়া হাজারো শিক্ষার্থী প্রথমে মৌন সমাবেশ করেন। পরে তারা ব্যানার হাতে স্লোগান দিতে দিতে মিছিল করে মিরপুর সড়কে প্রবেশ করলে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সড়ক অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা “অধ্যাদেশ চাই, সময় নষ্ট নয়” এবং “স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চাই—এখনই চাই” স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলেও তারা দাবি আদায়ে অনড় ছিলেন। অবশেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
বিশ্লেষণ:
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও প্রশাসনিক জটিলতা এর অগ্রগতি ব্যাহত করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। এত বড় একটি শিক্ষা কাঠামো দীর্ঘদিন অনিশ্চয়তায় থাকলে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় নানামুখী বিঘ্ন ঘটবে।
সরকার নীতিগতভাবে সম্মতি দিলেও অধ্যাদেশ প্রণয়ন দ্রুত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আবারও রাস্তায় নেমেছেন। তাদের এই নতুন কর্মসূচি দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে এবং এখন সবাই অপেক্ষা করছে আগামী কয়েক দিনের সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য।
