গ্লোবাল টিভি বাংলাদেশের হেড অব নিউজ নাজনীন মুন্নীকে চাকরি থেকে অপসারণের দাবিতে ভয়াবহ হুমকির অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটির কার্যালয়ে গিয়ে কয়েকজন তরুণ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন, নাজনীন মুন্নীকে বাদ না দিলে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো গ্লোবাল টিভির অফিসেও আগুন লাগানো হবে। হুমকিদাতারা নিজেদের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন।
ঘটনাটি ঘটে গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। নাজনীন মুন্নীর ভাষ্যমতে, ওই দিন তিনি অফিসিয়াল বৈঠক শেষে বাইরে অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে সাত থেকে আটজন তরুণ গ্লোবাল টিভির কার্যালয়ে প্রবেশ করে প্রথমে চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আহমেদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা আগে ফোনে যোগাযোগ করলেও কী উদ্দেশ্যে আসছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
সাক্ষাতে তরুণেরা প্রথমে সাম্প্রতিক একটি সংবেদনশীল ঘটনার সংবাদ প্রচার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে নাজনীন মুন্নীর নাম। এমডির কাছে তারা দাবি করেন, নাজনীন মুন্নীকে ‘আওয়ামী লীগের লোক’ আখ্যা দিয়ে চাকরি থেকে সরাতে হবে। এমডি আহমেদ হোসেন এ দাবি নাকচ করে বলেন, যাচাই-বাছাই করেই তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই।
নাজনীন মুন্নীর অভিযোগ, এই পর্যায়ে হুমকির ভাষা আরও তীব্র হয়। তরুণেরা বলেন, তাঁদের দাবি মানা না হলে গ্লোবাল টিভির কার্যালয়েও আগুন ধরানো হবে। তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নাজনীন মুন্নীকে চাকরিচ্যুত করার একটি লিখিত প্রতিশ্রুতিপত্রে সই করতেও চাপ দেন। এমডি সই করতে অস্বীকৃতি জানালেও তাঁর সঙ্গে থাকা এক সহকর্মী সেখানে সই করেন বলে জানান নাজনীন মুন্নী।
পরদিন বিষয়টি জানতে পেরে নাজনীন মুন্নী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটি গণমাধ্যমের ওপর ধারাবাহিক চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অংশ। অতীতেও রাজনৈতিক চাপের মুখে তাঁকে কর্মস্থল ছাড়তে হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশীদ স্বীকার করেছেন যে মহানগর শাখার এক সদস্য পৃথু কেন্দ্রীয় অনুমতি ছাড়া কয়েকজনকে নিয়ে গ্লোবাল টিভিতে গিয়েছিলেন এবং একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। তবে তাঁর দাবি, স্মারকলিপিতে অগ্নিসংযোগের কোনো কথা ছিল না। বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
নাজনীন মুন্নী মনে করেন, একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা দমনে ভয় সৃষ্টি করতে চাইছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, প্রমাণ ছাড়া তাঁকে রাজনৈতিক পরিচয়ে অভিযুক্ত করা অন্যায় এবং তিনি এসব হুমকির কাছে নত হবেন না।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| ঘটনার তারিখ | ২১ ডিসেম্বর |
| স্থান | গ্লোবাল টিভি বাংলাদেশ কার্যালয়, তেজগাঁও |
| হুমকিদাতার পরিচয় | বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহারকারী তরুণেরা |
| প্রধান দাবি | নাজনীন মুন্নীকে চাকরি থেকে অপসারণ |
| হুমকির ধরন | কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের হুমকি |
| চ্যানেল কর্তৃপক্ষের অবস্থান | অপসারণে অসম্মতি, মন্তব্যে অনাগ্রহ |
এই ঘটনায় গণমাধ্যমের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করা না গেলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
