সয়াবিন তেলের দাম হঠাৎ বাড়িয়ে ‘অঘোষিত সিন্ডিকেট’, কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে যাচ্ছে সরকার

ভোজ্যতেলের বাজার আবারও উত্তপ্ত। কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি শুধু ভোক্তাদের নয়, সরকারেরও নজর কাড়ে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন—এটা সরকারের অনুমোদিত নয় এবং দাম বাড়ানোর পুরো প্রক্রিয়াটি আইন লঙ্ঘন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন—সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে আইনগত জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে কী?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা জানান—সরকার বিষয়টি মাত্র আধা ঘণ্টা আগে জানতে পারে, অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা একতরফাভাবে দাম বাড়িয়েছে। তার ভাষ্য—“কোম্পানিগুলো একত্রিত হয়ে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যবসায়ীদের এ ধরনের সমন্বিত আচরণ বাজারে সিন্ডিকেটের ইঙ্গিত দেয়, যা রাষ্ট্রীয় বাজার ব্যবস্থার জন্য হুমকি।

সরকারের পাল্টা যুক্তি: আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমছে

উপদেষ্টা জানান, সরকারি ক্রয় কমিটি সম্প্রতি টিসিবির জন্য ২০ টাকা কম দামে তেল কেনার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা যে মূল্যহারে তেল সরকারকে দিচ্ছে, তার তুলনায় বাজারে এক লাফে ২০–২৯ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি করছে।
তার বক্তব্য—“এভাবে মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়িক নৈতিকতার লঙ্ঘন।”
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে—যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমছে, তখন দেশীয় বাজারে দামের উর্ধ্বগতি কোন যুক্তিতে?

ব্যবসায়ীদের দাবি ও সরকারী প্রতিক্রিয়া

তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন দাবি করেছে—তাদের দাম নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তারা বৈশ্বিক দামের ভিত্তিতে মূল্য হালনাগাদ করতে পারে।
কিন্তু বাণিজ্য সচিব এ যুক্তিকে সরাসরি খণ্ডন করেছেন। তিনি বলেন—“আমরা তাদের যুক্তি গ্রহণ করি না।” অর্থাৎ সরকার ব্যবসায়ীদের এই স্বাধীনতার ব্যাখ্যা মানতে রাজি নয়।

সরকার কি ব্যবস্থা নেবে?

সরকারি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে উপদেষ্টা কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেন। তবুও তিনি বলেন—আইন লঙ্ঘন করলে শাস্তি হবেই।
উপদেষ্টার বক্তব্য—“যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আইনে আছে—সবই নেওয়া হবে।”
এতে ধারণা করা হচ্ছে—ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরিমানা, লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

ভোক্তা বাজারে সম্ভাব্য প্রভাব

এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে অস্বচ্ছল ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে। ভোজ্যতেল এমন একটি পণ্য যার মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের উৎপাদন ও রান্নার ব্যয়ও বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন—এ ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হলে রমজান শুরুর আগেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

রমজানের প্রস্তুতি: সরকার আশাবাদী

তবে উপদেষ্টার ভাষায়—চিনি, ছোলা, ডাল, ডিমসহ বহু পণ্যের দাম কমছে এবং রমজান বাজারে কোনো ঘাটতি হবে না। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন—যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণই সরকারের লক্ষ্য, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।