পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে প্রকাশ্যে গুলি করে খ্যাতিমান মশলা ব্যবসায়ী আবদুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে প্রধান সন্দেহভাজন নয়ন। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর একটি বিশেষ দল বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। র্যাব-১০-এর মিডিয়া অফিসার তাপস কর্মকার জানান, নয়নকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা বিভাগ টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছে।
হত্যাকাণ্ডটি ঘটে বৃহস্পতিবার দুপুরে, শ্যামবাজারের ব্যস্ত এলাকায় মাওলা বক্স সরদার চক্ষু হাসপাতালের সামনে। এই এলাকাটি সবসময় মানুষের ভিড়ে গমগম করলেও হামলাকারী বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরো ঘটনায় মাত্র কয়েক সেকেন্ড লেগেছে। আহত অবস্থায় পড়ে থাকা আবদুর রহমানকে পথচারীরাই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আবদুর রহমান ছিলেন এলাকার অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তিনি শ্যামবাজার কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে মশলার পাইকারি ব্যবসা করতেন। তার জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবের কারণে এলাকাবাসীই নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীরাও তাকে সম্মান করতেন। তাই এমন একজন পরিচিত ব্যক্তিকে দিনের আলোয় গুলি করে হত্যা করায় স্থানীয়দের মধ্যে গভীর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, হত্যাকাণ্ডটি আকস্মিক নয়; বরং পরিকল্পিত একটি টার্গেট-কিলিং। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হত্যাকারী ভিকটিমের চলাফেরা সম্পর্কে আগে থেকেই তথ্য জানত। নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পেয়েছে। তার মোবাইল ফোন, কললিস্ট, অবস্থান এবং সাম্প্রতিক যোগাযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসা-বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং পাওনা-দেনা নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছিল। অনেকেই মনে করছেন, এসব বিরোধই হত্যার কারণ হতে পারে। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, এলাকার কিছু দুষ্কৃতকারী নানা সময় চাঁদাবাজি চালাচ্ছিল। আবদুর রহমান এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলে তাদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
নয়ন কি একা এই হত্যায় জড়িত, নাকি একটি চক্র এর পেছনে কাজ করেছে—এ প্রশ্ন এখন তদন্তকারীদের মূল ফোকাস। র্যাব জানিয়েছে, তদন্তাধীন বিষয়গুলো প্রকাশ করলে অপরাধী চক্র সতর্ক হয়ে যেতে পারে, তাই এখনই বিস্তারিত জানানো যাচ্ছে না। তবে অচিরেই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করা হবে।
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিয়ে এখন তীব্র আলোচনা চলছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, ব্যবসা এলাকায় পর্যাপ্ত সিসিটিভি থাকলেও কার্যকর মনিটরিংয়ের অভাবে অপরাধীরা সুযোগ পাচ্ছে। তারা চান, এলাকায় আরও পুলিশ টহল এবং কঠোর নজরদারি নিশ্চিত হোক।