ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির শেষ বিদায়কে ঘিরে রাজধানী ঢাকাজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের আবহ। শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের উদ্দেশ্যে তাঁর মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ সেখানে পৌঁছালে হাসপাতাল চত্বরে নীরবতা ও ভারী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আনুষ্ঠানিক ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ আবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের মর্গে রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সকাল ১০টার পর মর্গ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, আনসার, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড, তল্লাশি ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
এদিকে শরিফ ওসমান হাদির শেষ বিদায়ে অংশ নিতে হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন অসংখ্য মানুষ। রাজনৈতিক সহকর্মী, শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী এবং সাধারণ নাগরিকদের উপস্থিতিতে এলাকা পরিণত হয় শোকের সমাবেশে। অনেকেই নীরবে চোখের পানি মুছেছেন, কেউ কেউ আবার ক্ষোভ আর বেদনার কথা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কাছে হাদি ছিলেন শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও আদর্শের প্রতীক।
গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফাহাদ হোসাইন বলেন, হাদি আমাদের হয়ে কথা বলতেন। সমাজের অন্যায়, বৈষম্য আর অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন নির্ভীক। তাঁর শিক্ষা, সততা আর নৈতিকতা আমাদের পথ দেখাত। আজ মনে হচ্ছে, সেই সাহসী কণ্ঠ হঠাৎ করেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই শূন্যতা আমাদের প্রজন্ম দীর্ঘদিন অনুভব করবে।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুর থেকে শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ দেশে আনা হয়। আজ শনিবার বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে বলে পরিবার ও সংগঠন সূত্রে জানা গেছে।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে শরিফ ওসমান হাদি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তদের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাঁকে। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানেই দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে একটি গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। তাঁর আদর্শ, সংগ্রাম ও সাহসী অবস্থান বহু মানুষের মনে দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
