সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১১ ডিসেম্বর ঢাকায় আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। সেই ঘোষণার পর থেকেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে অপেক্ষা আর কৌতূহল। গত রোববার ঢাকায় পা রাখার পর সেই উত্তেজনা যেন আরও বেড়ে যায়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ঘিরে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ডেলিভারির রেকর্ডধারী এই পাকিস্তানি কিংবদন্তি এবার বিপিএলের দল ঢাকা ক্যাপিটালসের মেন্টর হিসেবে কাজ করবেন।
ঢাকার বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শোয়েব আখতার বাংলাদেশের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন। বিপিএল বা ঢাকা ক্যাপিটালস নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মূলত শোয়েবের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার, গতিময় বোলিং, আধুনিক যুগের ফাস্ট বোলাররা এবং তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ। বিশ্বের দ্রুততম বোলারকে সামনে পেয়ে এসব নিয়েই আগ্রহ ছিল সাংবাদিকদের।
পাকিস্তানের হয়ে ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে শোয়েব আখতার ছিলেন ভয়ংকর এক নাম। টেস্টে ৪৬ ম্যাচে ১৭৮ উইকেট, ওয়ানডেতে ১৬৩ ম্যাচে ২৪৭ উইকেট এবং ১৫টি টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ১৯ উইকেট। ২০১১ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার আগে তিনি তৈরি করেছেন অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় তিনটি ডেলিভারি সম্পর্কে জানতে চাইলে শোয়েব প্রথমেই নিজের চোখে সর্বকালের সেরা তিন ক্রিকেটারের নাম উল্লেখ করেন—শেন ওয়ার্ন, ওয়াসিম আকরাম ও শচীন টেন্ডুলকার।
এরপর নিজের প্রিয় ডেলিভারি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শোয়েব স্বভাবসুলভ রসিকতায় বলেন, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ডেলিভারিগুলোর মধ্যে আছে শচীন টেন্ডুলকারকে প্রথম বলে আউট করা, ব্রায়ান লারাকে বাউন্সারে অস্বস্তিতে ফেলা কিংবা গ্যারি কারস্টেনকে শরীরে আঘাত করা। তবে পরক্ষণেই হাসতে হাসতে তিনি পরিষ্কার করেন—এসব আসলে মজা। বাস্তবে তাঁর সবচেয়ে স্মরণীয় ডেলিভারিগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০০২ সালে কলম্বোতে শচীন টেন্ডুলকার ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে ইয়র্কারে আউট করা এবং ক্যারিয়ারের তৃতীয় বা চতুর্থ টেস্টে জ্যাক ক্যালিসকে একটি দুরন্ত গতির বলে পরাস্ত করা।
মাঠে আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণে শোয়েব ছিলেন একই সঙ্গে আলোচিত ও সমালোচিত। বাউন্সারে ব্যাটসম্যানদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার ঘটনাও কম নয়। এ প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়—ফাস্ট বোলিংয়ের চূড়ান্ত আনন্দ কী? পাঁচ উইকেট নেওয়া, নাকি হেলমেটে বাউন্সার লাগানো? উত্তরে শোয়েব বলেন, একজন ফাস্ট বোলারের উচিত নিজের বোলিং উপভোগ করা। লম্বা রানআপ, প্রতিটি ধাপ, প্রতিটি ডেলিভারি—সবকিছুকে একটি ইভেন্ট হিসেবে নেওয়া দরকার। তবে লক্ষ্য কখনোই কাউকে আঘাত করা নয়, বরং উইকেট নেওয়া এবং দর্শকদের জন্য দারুণ এক শো উপহার দেওয়া।
বর্তমান প্রজন্মের পেসারদের সঙ্গে নিজের সময়ের পার্থক্য নিয়েও কথা বলেন শোয়েব। তাঁর মতে, টি-টোয়েন্টি যুগে বেড়ে ওঠা ক্রিকেটারদের দোষ দেওয়া ঠিক নয়। ঘনঘন ম্যাচ, ভ্রমণ আর বিশ্রামের অভাবের কারণে তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ গতির বোলিং ধরে রাখা কঠিন। তবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও প্রস্তুতির সুযোগ পেলে আজও গতিময় বোলিং সম্ভব—এ বিশ্বাস শোয়েবের। তবুও তিনি মনে করেন, বিশ্ব ক্রিকেটে আগের মতো আগ্রাসন এখন কিছুটা অনুপস্থিত।
শোয়েব আখতারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার (সংক্ষেপে)
| ফরম্যাট | ম্যাচ | উইকেট |
|---|---|---|
| টেস্ট | ৪৬ | ১৭৮ |
| ওয়ানডে | ১৬৩ | ২৪৭ |
| টি-টোয়েন্টি | ১৫ | ১৯ |
সব মিলিয়ে, শোয়েব আখতারের উপস্থিতিতে বিপিএল যেমন বাড়তি রঙ পেয়েছে, তেমনি তাঁর স্মৃতিচারণায় আবারও ভেসে উঠেছে ক্রিকেট ইতিহাসের কিছু অবিস্মরণীয় মুহূর্ত।