রেকর্ড অনাদায়ী ঋণে পুনর্গঠন–বাদ দেওয়ার তাগিদ

সরকার পরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন ধরে লুকানো অবস্থায় থাকা অনাদায়ী ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ঋণ পুনর্গঠন এবং আংশিক বাদ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেয়। ব্যাংকারদের সঙ্গে আয়োজিত এক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মানসুর জানান, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছয় লাখ চুয়াল্লিশ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা মোট ঋণের প্রায় ছত্রিশ শতাংশ। দেশের ইতিহাসে এত বড় অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ এর আগে দেখা যায়নি।

জুন মাসে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ এগারো হাজার কোটি টাকা এবং গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি ছিল তিন লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার কোটি টাকা। সরকারের পরিবর্তনের পরপরই পূর্বে গোপন থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বড় অংশ সামনে চলে আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চার ডিসেম্বর ক্ষতিগ্রস্ত এবং পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম এমন ঋণ আংশিক বাদ দেওয়ার নীতিমালা অনুমোদন করে, যার লক্ষ্য ব্যাংকের হিসাব সহজ করা এবং প্রকৃত ঝুঁকি পরিমাপ করা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সভায় এমডিদের নীতিগত দপ্তরীয় নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয় যাতে আর্থিকভাবে দুর্বল ঋণগ্রহীতাদের পুনর্বাসন সহজ হয়। তিনি আরও বলেন, গভর্নর ক্ষতিগ্রস্ত ঋণে আংশিক বাদ দেওয়ার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

এক বেসরকারি ব্যাংকের এমডি জানান, সভায় গভর্নর এমন ঋণগ্রহীতাদের পুনঃতফসিল সুবিধা প্রদানের কথা বলেন যারা নিজেরা ঋণ নিয়মিত করতে আগ্রহী এবং বিদ্যমান নীতিমালা মানতে ইচ্ছুক। সভায় কৃষিখাতে ঋণ বণ্টন বৈষম্যের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। গভর্নর উল্লেখ করেন, কৃষিখাত দেশে চৌদ্দ থেকে পনেরো শতাংশ উৎপাদন অবদান রাখলেও ঋণ পায় মাত্র দুই শতাংশ, যা বাড়িয়ে দশ শতাংশের ওপরে নেওয়া প্রয়োজন।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা খাতে বছরের ভিত্তিতে কুড়ি শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব দেন গভর্নর। তিনি জানান, এই খাতে প্রভিশন এক শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ করা হবে।

সভায় ব্যক্তিগত ঋণ সীমা এবং কার্ড সীমা বাড়ানোর বিষয়ে পূর্বের প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ায় গভর্নর ডেপুটি গভর্নরদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন। এতকিছুর পরও অনাদায়ী ঋণ কমছে না। ব্যাংকাররা জানান, দুই বছরের অনুগ্রহকাল এবং সীমিত আগাম জমা দিয়ে পুনর্গঠন পরিকল্পনা আর্থিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই অনুমোদনের পর ফিরে আলোচনায় আসেন না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যাংকগুলো নিজেরাই এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাধা দেয়। তারা মনে করেন, নীতিগত ত্রুটি ঠিক না হলে অনাদায়ী ঋণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব নয়।

এজে