মুন্সিগঞ্জে অটোরিকশা চালক হত্যা মামলায় পাঁচজন গ্রেফতার, রহস্য উদঘাটন

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় নিখোঁজের চারদিন পর ডোবা থেকে অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ মজিবল মাঝির (৫২) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পুলিশি তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, কেবল অটোরিকশাটি ছিনতাই বা লুটের উদ্দেশ্যেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ঘটনার প্রেক্ষাপট ও মরদেহ উদ্ধার

নিহত মোহাম্মদ মজিবল মাঝি মূলত বরিশালের হিজলা উপজেলার বাসিন্দা হলেও দীর্ঘ সময় ধরে মুন্সিগঞ্জ সদরের রামপাল ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় সপরিবারে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন এবং জীবিকার তাগিদে অটোরিকশা চালাতেন। গত ৩১ অক্টোবর বিকেলে এক যাত্রী মাওয়া যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এরপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও তিনি ফিরে না আসায় পরিবার উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে। নিখোঁজের চারদিন পর ৩ নভেম্বর সকালে পঞ্চসার ইউনিয়নের রতনপুর আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন একটি ডোবায় হাত-পা বাঁধা ও কম্বল দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় তার নিথর দেহ পাওয়া যায়।

পুলিশের তদন্ত ও চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি

মরদেহ উদ্ধারের পর মুন্সিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় ও নিহতের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত মূল হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।

তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, চক্রটি মজিবলকে মাওয়া যাওয়ার কথা বলে কৌশলে পঞ্চসার ইউনিয়নের বানিক্যপাড়ার একটি নির্জন বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে জোরপূর্বক নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করা হয়। এরপর একটি ধারালো কেঁচি দিয়ে শরীরে আঘাত করে এবং হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা মরদেহটি একটি কম্বল ও চাদর দিয়ে মুড়িয়ে নিজেদের দখলে থাকা অটোরিকশায় করে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়।


গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয় ও জব্দকৃত আলামত

পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের বিস্তারিত তথ্য এবং উদ্ধার হওয়া আলামত নিচে সারণিবদ্ধ করা হলো:

বিষয়বিবরণ ও তথ্য
নিহতের নামমোহাম্মদ মজিবল মাঝি (অটোরিকশা চালক)
গ্রেপ্তারকৃত ১সোহাগ মোল্লা (৪৩)
গ্রেপ্তারকৃত ২জয় (৩১)
গ্রেপ্তারকৃত ৩ইমরান (৩০)
গ্রেপ্তারকৃত ৪হারুন (৫১)
গ্রেপ্তারকৃত ৫আলী হোসেন (৪০)
উদ্ধারকৃত আলামতছিনতাই হওয়া অটোরিকশা ও নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন
হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যঅটোরিকশা ছিনতাই ও বিক্রি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সাইফুল আলম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অটোরিকশাটি বিক্রির উদ্দেশ্যেই তারা একজন নিরীহ মানুষকে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে লুণ্ঠিত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রুজু করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

ওসি আরও যোগ করেন যে, এই চক্রটির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে অধিকতর তদন্ত চলছে। এই ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ রুখতে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ নিয়মিত টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

সামাজিক প্রভাব ও জননিরাপত্তা

রাজধানীর কোলঘেঁষা জেলা মুন্সিগঞ্জে অটোরিকশা চালকদের টার্গেট করে এ ধরনের অপরাধ ইদানীং বেড়েছে। বিশেষ করে নির্জন স্থানে বা রাতের আঁধারে যারা রিকশা চালান, তাদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। নিহতের শোকাহত পরিবার এখন কেবল বিচারপ্রার্থী।

মজিবল মাঝির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে তার স্থায়ী ঠিকানা বরিশালে পাঠানো হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। সামান্য একটি অটোরিকশার লোভে একজন মানুষকে এভাবে প্রাণ দিতে হওয়ায় এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।