নেলসন রোলিহলাহলা ম্যান্ডেলা, বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রতীক এবং মানবতার চিরন্তন আলোকপ্রদীপ, জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজো অঞ্চলের একটি অভিজাত পরিবারে। আজ বিশ্বব্যাপী ম্যান্ডেলা দিবস পালিত হয়, যা মানবমুক্তি, গণতন্ত্র, সমতা এবং সহিষ্ণুতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি (১৯৯৪–১৯৯৯) ছিলেন। তিনি আইনশাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই তিনি উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হন এবং নিপীড়িত মানুষের অধিকার ও ন্যায়ের দাবিতে লড়াই করেন।
১৯৪৩ সালে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (এএনসি) যোগ দেন এবং ১৯৪৪ সালে এএনসি–র ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনটির মাধ্যমে তরুণদের আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন এবং বর্ণবাদবিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন। ম্যান্ডেলা নেতৃত্ব দেন উমখন্তো উই সিযওয়ে (Umkhonto we Sizwe) সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন, যা বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন আন্দোলনকারীকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। পাঁচ বছর ধরে চলা বিচার শেষে সকলকে নির্দোষ প্রমাণিত করা হয়। কিন্তু ম্যান্ডেলার সংগ্রামের পথ এখানেই থেমে থাকেনি।
১৯৬২ সালে তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান। রবেন দ্বীপের বন্দিশালায় আটক থাকলেও তার বিশ্বাস ও সাহস কখনো বন্দী হয়নি। ২৭ বছর তিনি কারাগারে কাটান, মানবতার মুক্তির স্বপ্ন বুকে নিয়ে। এই দীর্ঘকালীন বন্দিত্বের সময় তার দৃঢ় সংকল্প, ন্যায়ের প্রতি অটল বিশ্বাস এবং অহিংস প্রতিরোধের নীতি তাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস বানিয়ে দেয়।
১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হয়ে তিনি ফিরে আসেন আরও দৃঢ় নেতৃত্বের সঙ্গে। তিনি শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটান। তার নেতৃত্বে দেশটি ১৯৯৪ সালে বহুবর্ণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এবং ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজে সংহতি, সমতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়।
২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলা মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার জীবনকাহিনী, সংগ্রাম ও দর্শন আজও মানবতার জন্য অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস। নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে যায় স্বাধীনতার আলো, প্রতিরোধের প্রেরণা এবং মানবতার প্রতি মানুষের ভালোবাসার স্থায়ী প্রতীক।
বিশ্বজুড়ে তার জন্মদিনকে ম্যান্ডেলা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এটি শুধু একটি স্মরণ দিবস নয়, বরং ন্যায়, সমতা, সহিষ্ণুতা এবং মানবতার প্রতি প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করার দিন। শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকারকর্মী এবং সাধারণ মানুষ ম্যান্ডেলার জীবন ও আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় নিজেদের অবদান রাখেন।
শ্রদ্ধাঞ্জলি নেলসন ম্যান্ডেলাকে। আপনার নাম চিরকাল মানবতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
