প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য খেয়ালে চিরচেনা তপ্ত বালুকারাশির দেশ সৌদি আরব এখন সাদা বরফের চাদরে ঢাকা। দীর্ঘ ৩০ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বিরল ও ভারী তুষারপাত। গত কয়েক দিনের আকস্মিক শীতল আবহাওয়া ও বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে আরবের মরুভূমি ও রুক্ষ পাহাড়গুলো এক নিমিষেই রূপ নিয়েছে চোখজুড়ানো এক ‘উইন্টার ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এ। এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের এক বিস্ময়কর সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় উচ্চভূমিগুলোতে শক্তিশালী একটি শীতল বায়ুস্তরের প্রভাবে এই আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। বিশেষ করে তাবুক অঞ্চলের জাবাল আল লজ এবং ট্রোজেনা পার্বত্য এলাকায় তাপমাত্রা দ্রুত হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২,৬০০ মিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালে প্রবল বৃষ্টির পরিবর্তে শুরু হয় তুষারপাত। মরুভূমির রুক্ষ পাহাড়ের ওপর সাদা বরফের আস্তরণ এমন এক দৃশ্য তৈরি করেছে, যা দেখে মনে হচ্ছে এটি কোনো ইউরোপীয় শৈলশহর।
সৌদি আরবের বর্তমান আবহাওয়া ও তুষারপাতের পরিসংখ্যান:
| বিশেষ তথ্যাদি | বিস্তারিত বিবরণ |
| বিরল রেকর্ড | দীর্ঘ ৩০ বছর পর এমন ব্যাপক তুষারপাত। |
| আক্রান্ত মূল অঞ্চল | তাবুক, জাবাল আল লজ, ট্রোজেনা এবং হেইল। |
| সর্বনিম্ন তাপমাত্রা | পার্বত্য এলাকায় প্রায় -৪° সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। |
| প্রাকৃতিক দৃশ্য | বরফে ঢাকা মরুভূমি এবং বরফের ওপর উটের চলাচল। |
| উচ্চতা ও প্রভাব | ২,৬০০ মিটার উচ্চতায় ঘন তুষার; নিচু এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত। |
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে এক অভাবনীয় বৈপরীত্য ফুটে উঠেছে। যেখানে উটের পালকে বালুর পরিবর্তে ধবধবে সাদা বরফের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে—যা মরুভূমির চিরন্তন চিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি উদযাপন করতে দলে দলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। তাবুক এবং হেইল এলাকায় অনেককে পেশাদারদের মতো স্কিইং করতে এবং বরফ নিয়ে মেতে উঠতে দেখা গেছে। মরুভূমির ধূসর পাহাড় আর আকাশচুম্বী মেঘের নিচে সাদা বরফের এই সমারোহ পর্যটকদেরও ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করছে।
তবে এই আনন্দঘন পরিবেশের পাশাপাশি আবহাওয়া বিভাগ সতর্কতাও জারি করেছে। তুষারপাতের সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালী ঝোড়ো হাওয়া এবং বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যের আবহাওয়ার ধরনে মৌলিক পরিবর্তন আসছে। যদিও এটি বর্তমান সময়ে এক বিস্ময়, তবে সৌদি আরবের উচ্চাভিলাষী ‘নিওম’ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে ট্রোজেনাকে একটি আন্তর্জাতিক শীতকালীন ক্রীড়া কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা রয়েছে, এই তুষারপাত সেই স্বপ্নকেই যেন বাস্তবে রূপ দেওয়ার আভাস দিচ্ছে।
মরুভূমির প্রখর রোদে অভ্যস্ত সৌদি নাগরিকদের কাছে এটি ছিল স্বপ্নের মতো এক দিন। হাজার হাজার মানুষ ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনে বন্দি করেছেন এই রূপালী মরুভূমিকে। প্রকৃতির এই রূপবদল আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পৃথিবীর আবহাওয়া কতটা পরিবর্তনশীল এবং রহস্যময়।
