মব ভায়োলেন্সকে ক্ষমতার স্তম্ভ মনে করেন রাষ্ট্রের দায়িত্বে অধিষ্ঠিতরা: ইফতেখারুজ্জামান

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সংবাদমাধ্যমের ওপর সংঘটিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সোমবার তিনি বলেন, “রাষ্ট্রকাঠামোর দায়িত্বে যারা অধিষ্ঠিত, তারা মব ভায়োলেন্সের পেছনের শক্তিকে তাদের ক্ষমতার একটি মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করেন। এটি রাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।”

এই মন্তব্য তিনি নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও সম্পাদক পরিষদের যৌথ প্রতিবাদ সভায় করেন। সভার শিরোনাম ছিল ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’, যা পরিচালনা করেন দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

তিনি আরও বলেন, “আজকের পরিস্থিতি প্রতিহত করার দায় দেশের প্রতিটি নাগরিকের, কিন্তু মূল দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়। দেশের মানুষের নিরাপত্তা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তা স্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। বক্তারা উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই হামলা কোনো একক সংবাদমাধ্যমকে লক্ষ্য করে নয়, বরং এটি সরাসরি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের ওপর আঘাত

সাক্ষরদের বক্তব্য সংক্ষেপে টেবিল আকারে তুলে ধরা হলো:

প্রতিনিধি/প্রতিষ্ঠানবক্তব্যের সারমর্ম
বরেণ্য নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীগণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হামলা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসরকারের নিষ্ক্রিয়তা ভয়ঙ্কর এবং তা মেনে নেওয়া যায় না
সাংবাদিক ও সম্পাদকঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ছাড়া গণমাধ্যম সুরক্ষা সম্ভব নয়
রাজনীতিকহামলার ঘটনার মূল দায় সরকারের এবং তদন্ত জরুরি

সভা শেষে হোটেলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। নোয়াব সভাপতি ও সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত হামলার বিচার সম্পন্ন হবে না, আমাদের আন্দোলন চলবে। সাংবাদিকদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী মাসের মাঝামাঝি একটি বৃহৎ মহাসম্মেলনও আয়োজন করা হবে।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সমকাল সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসান, এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা এককথায় মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দেন।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী আইরিন খান, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ব্যবসায়ী ও শিল্প সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

বক্তারা সমবেতভাবে বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতন্ত্রের বিকাশে সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং সব পেশাজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এখন সময়ের দাবি।”