মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা আবার পাল্টে যাবে, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গত শনিবার দেওয়া এক বক্তৃতায় ইয়াহিয়া সিনওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। ইস’রায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন করে লড়াই বাধলে তা মধ্যপ্রাচ্যের চেহারাকেই বদলে দেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। দখলদার ইস’রায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিকতম লড়াইয়ে হামাস জিতেছে, এই দাবিও করেন তিনি। দখলদার ইস’রায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিকতম লড়াইয়ে হামাস জিতেছে, এই দাবিও করেন তিনি।
সিনওয়ার দাবি করেন, ইস’রায়েল টানা ১১ দিন বিমান হামলা চালিয়েও ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধক্ষমতাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারেনি। এই সময়ে চলা লড়াইয়ে হামাসের সুড়ঙ্গপথের মাত্র ৩ শতাংশের কম ধ্বংস করতে পেরেছে তারা।
সিনওয়ার বলেন, ‘আমাদের জনগণ দখলদার শক্তি ও বাকি বিশ্বকে এটা দেখিয়ে দিয়েছে, মুসলিম উম্মাহ (মুসলিম সম্প্রদায়) পবিত্র আল–আকসা মসজিদকে রক্ষা করতে প্রস্তুত।’ জেরুজালেমে ইহুদিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, আল–আকসা মসজিদকে বিভক্ত করা ও মুসলিম নিধনের ইস’রায়েলি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের প্রশংসা করেন তিনি।

সিনওয়ার যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন উপস্থিত শ্রোতারা বারবার ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ মহান) ধ্বনি ও হামাসের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। মুহুর্মুহু স্লোগানে মাঝেমধ্যেই বক্তৃতায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন তিনি।
ইস’রায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দেশটির সঙ্গে চুক্তি সই করা আরব দেশগুলো ও তাদের শাসকদের প্রত্যাখ্যান করেন সিনওয়ার। পশ্চিম তীরে ইস’রায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তামূলক সমন্বয় কার্যক্রম চালানোয় মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষেরও নিন্দা জানান এই হামাস নেতা।
ইস’রায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিকতম লড়াইয়ে হামাস তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করেছে দাবি করে সিনওয়ার বলেন, ‘আমরা শত্রুদের প্রমাণ করে দেখিয়েছি, আমরা আল–আকসা মসজিদ রক্ষা করতে সক্ষম এবং এ জন্য চড়া মূল্য দিতেও প্রস্তুত আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও ১৯৪৮–এর ভূখণ্ডে (ইস’রায়েল) আমাদের জনগণের পুনর্জাগরণ শত্রুদের ওপর রকেট হামলার চেয়ে বেশি চাপ তৈরি করেছে।’
সিনওয়ার বলেন, ইস’রায়েল–হামাস লড়াইকালে জর্ডান ও লেবানন সীমান্তেও ইস’রায়েলবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এটি ইস’রায়েলকে এই বার্তা দিয়েছে যে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা আরব দেশগুলোর শাসকদের কথা ‘মুসলিম উম্মাহ শেষ হয়ে গেছে’ শুনলে তাদের প্রতারিত হতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা আবার পাল্টে যাবে ইস’রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ হলে

ফের সহিংসতা শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছে
এএফপি জানায়, হামাসের শীর্ষ আরেক নেতা খলিল আল–হায়া আজ সোমবার ইস’রায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলের অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন কার্যক্রম সমর্থন করা দেশটির উগ্রবাদী সংগঠনগুলো বৃহস্পতিবার পূর্ব জেরুজালেম ও আল–আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রা বের করলে নতুন করে সহিংসতা শুরু হতে পারে।
মুক্তি দেওয়া হলো দুই ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীকে
রয়টার্স জানায়, ফিলিস্তিনের দুই অধিকারকর্মীকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। এ দুজন হলেন পূর্ব জেরুজালেমের পার্শ্ববর্তী শেখ জাররাহ এলাকার বাসিন্দা মুনা এল-কুর্দ ও তাঁর যমজ ভাই মোহাম্মদ এল-কুর্দ। গত রোববার তাঁদের আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

খবরে বলা হয়, পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের যে পাঁয়তারা চলছে, এর বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছিলেন ওই দুই ভাইবোন। এ কারণে তাঁদের আটক করা হয়। তবে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে সম্প্রতি যে সংঘর্ষ হয়েছিল, তাতে অংশ নিয়েছিলেন ওই দুজন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন মুনা। ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে গত মাসে অনুষ্ঠিত লড়াইয়ে আড়াই শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই গাজার বাসিন্দা।

আরও দেখুনঃ