বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও প্রসারিত করতে এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ব্যাংকটি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি ঋণ সুবিধা চালু করেছে, যার মাধ্যমে বিদেশ গামী ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ভাষাশিক্ষা এবং কারিগরি দক্ষতা অর্জনের জন্য আর্থিক সহায়তা পাবেন। এই প্রকল্পের আওতায় একজন শিক্ষার্থী বা প্রশিক্ষণার্থী ১ লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য হলো বিদেশে গিয়ে যাতে বাংলাদেশি কর্মীরা ভালো মানের কাজ এবং সম্মানজনক বেতন নিশ্চিত করতে পারেন।
বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাসরুর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিগত কয়েক বছরে দেশে গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও, বিদেশে গিয়ে অনেকেই যথাযথ প্রশিক্ষণ বা ভাষাগত দক্ষতার অভাবে সাধারণ শ্রমিক পর্যায়ের কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হন। তার মতে, বিদেশে গিয়েও শিক্ষার্থীরা যদি যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তবে তাদের উচ্চ আয়সম্পন্ন কাজের সুযোগ বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এই ঋণ সেই সুযোগ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ঋণটি মূলত জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি এবং রাশিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোতে বিদেশি ভাষা শিক্ষা এবং বিশেষ দক্ষতা উন্নয়ন কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য প্রদান করা হচ্ছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘দক্ষতার মূল্য বিশ্বজুড়ে, ভাষা জানলে সুযোগ বাড়ে।’
ঋণ গ্রহীতাদের সুবিধার্থে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের মেয়াদ এবং সুদের হার নির্ধারণ করেছে। ঋণের মেয়াদ দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ শতাংশ, যা প্রয়োজন সাপেক্ষে পরিবর্তনযোগ্য। ঋণ পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং তাকে স্থানীয় বাসিন্দা হতে হবে। এছাড়া আবেদনকারীকে গন্তব্য দেশ থেকে ইস্যু করা ভর্তি নিশ্চিতকরণপত্র বা অফার লেটার এবং অন্তত মধ্যম পর্যায়ের ভাষাশিক্ষার সনদ দাখিল করতে হবে। উল্লেখ্য, এই ঋণ শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদি কোর্সের জন্য প্রযোজ্য, যার মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই বছর।
ঋণের পরিমাণ ভেদে জামানতের শর্তেও ভিন্নতা রাখা হয়েছে। নিচে এ সংক্রান্ত একটি সারণী দেওয়া হলো:
| ঋণের পরিমাণ (টাকা) | জামানত বা শর্ত |
| ১ লাখ – ৩ লাখ | কোনো স্থাবর সম্পত্তির জামানত প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র একজন জামিনদারের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি এবং সচল ব্যাংক হিসাবের চেকের তিনটি পাতা জমা দিতে হবে। |
| ৩ লাখ – ৫ লাখ | ঋণসীমার ন্যূনতম দ্বিগুণ বাজারমূল্যের স্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে। |
| ৫ লাখ – ১০ লাখ | ব্যাংকের অনুকূলে রেজিস্টার্ড মর্টগেজ এবং অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল জমা দিতে হবে। |
ঋণ প্রসেসিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফার লেটার, পাসপোর্ট, সর্বশেষ একাডেমিক সার্টিফিকেটের ফটোকপি এবং ভাষা যোগ্যতার সনদ। এছাড়া একজন সক্ষম জামিনদারের তথ্যও প্রদান করতে হবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছে যে এই ঋণের জন্য কোনো মধ্যস্থতাকারী বা এজেন্ট নেই। আগ্রহীদের অনলাইনের মাধ্যমে বা সরাসরি নিকটস্থ শাখায় গিয়ে আবেদন করতে হবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ১৬২৩৮-এ যোগাযোগ করা যাবে।
