বিশ্ব শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা

বিশ্বের শেয়ারবাজারে মঙ্গলবার স্পষ্ট মন্দাভাব লক্ষ্য করা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে শীতলতার ইঙ্গিত এবং ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের সম্ভাবনাকে ঘিরে নতুন আশাবাদ—এই দুই বিপরীতমুখী সংকেত একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আগের মতো ঝুঁুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত না নিয়ে অপেক্ষা ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কৌশল বেছে নিচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারের পাশাপাশি পণ্যমূল্য ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারেও।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তরের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য এই বাজারচাপের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। নভেম্বর মাসে দেশটির বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে, যা ২০২১ সালের পর সর্বোচ্চ। দীর্ঘ সময় ধরে শক্ত অবস্থানে থাকা মার্কিন শ্রমবাজারে এই পরিবর্তন স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নিয়োগের গতি ধীরে ধীরে কমছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার চাকরি কমে গেছে। যদিও নভেম্বর মাসে ৬৪ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তবু তা বছরের শুরুর দিকের তুলনায় অনেক কম এবং বাজারের প্রত্যাশাও পূরণ করতে পারেনি।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এসব তথ্য প্রত্যাশার তুলনায় দুর্বল হলেও তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা তৈরির মতো ভয়াবহ নয়। ফরেক্স ডটকমের বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজাকজাদা জানিয়েছেন, এই তথ্য প্রকাশের পর আগামী মার্চেই ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাতে পারে—এমন সম্ভাবনা বেড়ে প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। আগে এই সম্ভাবনা ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। তবে বিনিয়োগকারীরা এবার সুদহার কমার ইতিবাচক দিকের চেয়ে অর্থনৈতিক শ্লথগতির সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন।

ভোক্তা ব্যয়ের তথ্যও বাজারকে পুরোপুরি স্বস্তি দিতে পারেনি। অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রি অপরিবর্তিত ছিল, যেখানে সামান্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসের বিক্রির হারও সংশোধন করে মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশে নামানো হয়েছে। তবে ইটোরোর বিশ্লেষক ব্রেট কেনওয়েল মনে করেন, জিডিপি হিসাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গ্রীষ্মের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা ভোক্তাদের মধ্যে এখনও আংশিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকার ইঙ্গিত দেয়।

পণ্যমূল্যের বাজারে সবচেয়ে বড় চাপ এসেছে তেলের দামে। ইউক্রেনে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা বাড়ায় এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে—এমন আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম দ্রুত কমে গেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের নিচে নেমেছে, যা মে মাসের পর সর্বনিম্ন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউটিআই তেলের দাম ৫৫ ডলারের নিচে নেমে ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।

প্রধান অর্থনৈতিক সূচকের সংক্ষিপ্ত চিত্র নিচে দেওয়া হলো—

সূচক | সর্বশেষ অবস্থা
মার্কিন বেকারত্ব হার | ৪.৬ শতাংশ
অক্টোবরে চাকরি হ্রাস | ১,০৫,০০০
নভেম্বরে নতুন চাকরি | ৬৪,০০০
ব্রেন্ট তেলের দাম | ৬০ ডলারের নিচে
ডব্লিউটিআই তেলের দাম | ৫৫ ডলারের নিচে

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের একটি সমঝোতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি। ন্যাটো-ধাঁচের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং রাশিয়ার সম্মতির বিষয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এই মন্তব্য ইউরোপীয় বাজারেও প্রভাব ফেলেছে; শান্তির সম্ভাবনায় প্রতিরক্ষা খাতের শেয়ার কমেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দুর্বল শ্রমবাজারের তথ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদহার কমানোর প্রত্যাশা জোরদার করেছে। এশিয়ার বাজারে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্ভাব্য সুদহার বৃদ্ধির আগে ডলারের বিপরীতে ইয়েন তুলনামূলক শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

কোম্পানি পর্যায়ে ফাইজারের শেয়ার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। কোভিড-সম্পর্কিত আয়ের পতন সামাল দিতে নতুন পণ্যে বিনিয়োগ বাড়ানোর ফলে চলতি বছরে আয় কমতে পারে—এমন পূর্বাভাসই এই দরপতনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।