বাংলাদেশের বীমা আইন, ২০১০ অনুযায়ী, কোনো বীমা নীতি ধারক তার দাবির সময়মতো নিষ্পত্তি না হলে সুদ পাওয়ার অধিকার সংরক্ষিত। আইনটির ৭২ ধারা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, কোনো বীমা কোম্পানি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিটি পরিশোধ না করে, তবে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিলম্বিত মূল অর্থের উপর সুদ প্রদান করতে হবে। এই বিধান মূলত নীতি ধারকদের অধিকার রক্ষা এবং অযথা বিলম্ব প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে প্রণীত।
কবে সুদ প্রযোজ্য?
নিম্নলিখিত শর্তগুলির ক্ষেত্রে সুদ প্রযোজ্য হবে:
দাবি বৈধ বীমা নীতির অধীনে প্রদানের জন্য নির্ধারিত।
দাবিকারী সমস্ত প্রয়োজনীয় দলিল ও তথ্য যথাযথভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে জমা দিয়েছেন।
বীমা কোম্পানি দাবিটি প্রদানের জন্য ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়, যেটি দাবির পরিশোধযোগ্যতার তারিখ বা সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর থেকে গণ্য করা হবে।
এ ধরনের ক্ষেত্রে, যদি বিলম্ব তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো কারণে না ঘটে, তাহলে বীমা কোম্পানিকে বিলম্বিত মূল অর্থের উপর সুদ প্রদান বাধ্যতামূলক।
সুদের হার ও হিসাব পদ্ধতি
সুদ মাসিক ভিত্তিতে গণনা করা হয় এবং বর্তমান ব্যাংকের সুদের হারের উপর ৫% অতিরিক্ত নির্ধারিত। এটি বীমা কোম্পানিগুলিকে দ্রুত দাবি নিষ্পত্তিতে প্রেরণা জোগায় এবং নীতি ধারকরা কোনো অযথা বিলম্বের জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পান। উদাহরণস্বরূপ, যদি সাধারণ ব্যাংক সুদের হার ৬% হয় এবং দাবি চার মাস বিলম্বিত হয়, তাহলে কার্যকরী সুদের হার হবে ১১% (৬% + ৫%) এবং এটি মাসিক ভিত্তিতে গণনা করা হবে যতক্ষণ না দাবি সম্পূর্ণভাবে পরিশোধিত হয়।
প্রযোজ্য ক্ষেত্র
এই বিধান জীবন বীমা এবং সাধারণ (নন-লাইফ) বীমা উভয়ের জন্য প্রযোজ্য, যেহেতু দাবি বিতর্কিত নয় এবং সকল প্রয়োজনীয় দলিল জমা দেওয়া হয়েছে।
মূল বিষয়গুলো
৯০ দিনের বেশি বিলম্ব আইন লঙ্ঘন।
অপ্রত্যাশিত বিলম্বের ক্ষেত্রে ছাড়া, বীমা কোম্পানি সুদ দিতে বাধ্য।
সুদ মাসিক ভিত্তিতে বর্তমান ব্যাংক হারের ৫% অতিরিক্ত।
সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নীতি ধারকদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
এই আইন বাংলাদেশে ন্যায্য ও স্বচ্ছ বীমা পরিবেশ নিশ্চিত করে, নীতি ধারকদের প্রশাসনিক বিলম্ব বা প্রক্রিয়াগত জটিলতা থেকে সুরক্ষা দেয় এবং বীমা খাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।