বিয়ে করেও সংসার করা হলো না হবিগঞ্জের রাজনের, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত

হবিগঞ্জের গোপায়া ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের যুবক আব্দুল মোহিত রাজন (৩০) বিয়ে করেও সংসার করতে পারেননি। রবিবার (২১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে সৌদি আরবের রিয়াদের ইয়াসমিন এলাকাতে রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগতির একটি লরির চাপায় তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।

নিহতের বাড়ি ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাজন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় নববিবাহিতা স্ত্রীকে রেখে জীবিকার তাগিদে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে যান। সেখানে কাজের সময় ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। স্থানীয় সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার পর সৌদি পুলিশ লরিচালককে গ্রেফতার করেছে।

গোপায়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মন্নান জানান, তিনি সোমবার খবর পেয়ে নিহত রাজনের বাড়িতে গেছেন এবং পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন সহযোগী লাশ দেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করবেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা সানিয়া বলেন, তিনি এখনও বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। তবে তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবেন।

পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজন ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান। জীবিকার তাগিদে বিদেশে কাজ করতে গিয়েও তিনি পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ রাখতেন। তবে, কপাল খারাপের কারণে বিয়ের আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। স্ত্রী এখনও নববিবাহিতা এবং শোকগ্রস্ত অবস্থায় বাড়িতে রয়েছেন।

নিহত রাজনের প্রাথমিক তথ্য :

তথ্যবিবরণ
নামআব্দুল মোহিত রাজন
বয়স৩০ বছর
গ্রামের নামআনন্দপুর, গোপায়া ইউনিয়ন, হবিগঞ্জ সদর
পিতার নামনূর মিয়া
বিবাহের তারিখজুলাই ২০২৪
সৌদি আরবে অবস্থানরিয়াদ, ইয়াসমিন এলাকা
দুর্ঘটনার তারিখ ও সময়২১ ডিসেম্বর, দুপুর
দুর্ঘটনার ধরনলরির চাপা দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা
দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষসৌদি পুলিশ, লরিচালক গ্রেফতার

স্থানীয়দের মতে, রাজন ছিলেন পরিশ্রমী, সদয় ও পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ। জীবিকার তাগিদে বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করলেও, আকস্মিক দুর্ঘটনা তার পরিবারকে গভীর শোকে ফেলে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সৌদি আরবের মতো বহুল সড়ক যানজটপূর্ণ শহরে রাস্তা পারাপারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা সবসময় থাকে, যা বিদেশে থাকা প্রবাসীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।

পরিবার এবং স্থানীয় প্রশাসন আশা করছেন, নিহত যুবকের লাশ দ্রুত দেশে আনা হবে এবং প্রয়োজনে মানবিক সহায়তা ও প্রশাসনিক সমর্থন প্রদান করা হবে। এছাড়া, স্থানীয় সমাজ ও প্রতিবেশীরা এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।

এই দুর্ঘটনা শুধুমাত্র রাজনের পরিবারকে নয়, পুরো এলাকায় একটি শোক ও সচেতনতার বার্তা সৃষ্টি করেছে। বিয়ে এবং জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এই মর্মান্তিক ঘটনাই প্রমাণ করে।