বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও জাতীয় নির্বাচন সম্ভাবনা দেখছেন মির্জা ফখরুল

বিভ্রান্তি, হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যদিও একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অনিশ্চয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

আজ রবিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি গঠিত মাওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি এই আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও এখন নির্বাচনের একটি সম্ভাবনা পরিষ্কার হচ্ছে যে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী সচেতনভাবে দেশের নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চাইছে। তারা বিভিন্ন দাবি তুলে নির্বাচনকে ব্যাহত, বিলম্বিত ও বন্ধ করার চেষ্টা করছে। অথচ দেশের মানুষের প্রধান চাহিদা হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার, যার পেছনে জনগণের ম্যান্ডেট থাকবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে সমর্থন দিয়ে কালবিলম্ব না করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের অর্থনীতি দিনে দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।

তিনি দাবি করেন, আগামীকাল সোমবার ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যার রায়’কে কেন্দ্র করে একটি মহল দেশে নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা করছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে একটি গোষ্ঠী দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করে মির্জা ফখরুল বলেন, এজন্য নির্বাচন প্রসঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন।

আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, সরকার যদিও দৃঢ়ভাবে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘোষণা করেছে, তবুও সামগ্রিক পরিস্থিতি একটি ‘কালো মেঘের’ চিত্র তুলে ধরছে। নির্বাচন সময়মতো না হলে দেশের জন্য বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি গণভোট প্রসঙ্গে বলেন, চারটি প্রশ্ন জনগণের জন্য কতটা বোধগম্য হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর হওয়ায় তারা এসব জটিল প্রশ্ন বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা কমাতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

গণতন্ত্রের পথে কোনো বাধা জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সেই নির্বাচনগুলোকে সহায়তা করেছিল। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানান, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন, তা সফল করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান। বক্তব্য দেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম আজাদসহ আরও অনেকে।

এসএস