বিপিএল থেকে বাদ ৯ তারকা! মার্শালের চাঞ্চল্যকর ব্যাখ্যা

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নিলামে অংশ নিতে না–পারাদের তালিকায় নাম এসেছে জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয় ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতসহ মোট ৯ জনের। ফিক্সিং–সন্দেহে তাদের বাদ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল—নিষেধাজ্ঞা নেই, তবু তারা কেন খেলতে পারবেন না?

আজ এই প্রশ্নের জবাব দিলেন বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (ACU) প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল। বিসিবির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান—তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু ক্রিকেটারকে বিপিএলে না রাখার সুপারিশই শুধু করা হয়েছে, কোনো লিখিত শাস্তি বা অফিসিয়াল ব্যান নয়।


তদন্তাধীন ক্রিকেটার, তাই বিপিএলে না রাখার সুপারিশ

মার্শাল জানান, তার হাতে থাকা তথ্য–উপাত্ত অনুযায়ী তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এদের বিপিএলে অংশ নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন—
‘আমার কাছে যে সব তথ্য আছে, তা দিয়ে আগে তদন্ত শেষ করতে হবে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে বলেছি—ওদের এবার বিপিএলে রেখো না। তাদের অধিকার হরণ করতে চাই না।’

তিনি আরও জানান, শুধু ক্রিকেটার নয়, আরও কয়েকজনকে বিপিএলে আসতে নিষেধ করা হয়েছে, তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না।


ফিক্সিংয়ের সংকেত: কীভাবে শনাক্ত হয়?

মার্শাল ব্যাখ্যা দেন, বিশ্ব ক্রিকেটে ফিক্সিং বা দুর্নীতিতে জড়িতরা সাধারণত কিছু ‘সিগন্যাল’ বা সংকেত ব্যবহার করে থাকে। তিনি উদাহরণ দেন—

  • ওভারের দ্বিতীয় বলে অকারণে ওয়াইড করা

  • হঠাৎ ব্যাটের হ্যান্ডেলের টেপের রং পরিবর্তন

  • নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি বা শারীরিক সংকেত

এসব সংকেত বেটিংকারী সিন্ডিকেটকে নির্দেশ দেয়। মার্শালের মতে, সারা বিশ্বে ব্যবহৃত এমন প্রায় সব সিগন্যালই তার জানা, এবং সন্দেহভাজনদের আচরণ বিশ্লেষণ করে ৯০০ পৃষ্ঠার বিস্তৃত প্রতিবেদনে এবারের বিপিএলে তাদের না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।


নিষেধাজ্ঞা দিতে হলে যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পেরোতে হয়

প্রশ্ন উঠেছিল—যদি ফিক্সিংয়ের প্রমাণ থাকে, তাহলে সরাসরি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না কেন? এর জবাবে মার্শাল বলেন—

‘৯০০ পাতার প্রতিবেদনটি আমরা এখনই পেয়েছি। নিষিদ্ধ করতে হলে আনুষ্ঠানিক তদন্ত, সাক্ষ্য–প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার—এসব সম্পন্ন করতে হয়। দোষী প্রমাণিত হলে নিষেধাজ্ঞা আসবে। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ, কয়েক মাস সময় লেগে যায়।’

অর্থাৎ এখন যে অবস্থা, তা ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা’। দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ অপরাধী নন—এই নীতিই অনুসরণ করছে বিসিবি।


নিষেধাজ্ঞা নয়, অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সতর্কতা

মার্শাল স্পষ্ট করে জানান—

  • এখনো কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি

  • তদন্ত চলমান

  • সন্দেহভাজনদের আপাতত বিপিএল থেকে দূরে রাখাই নিরাপদ

  • তদন্ত শেষে দোষ প্রমাণিত হলে তখন শাস্তি দেওয়া হবে


বিপিএলে না থাকা ৯ ক্রিকেটার (সন্দেহভাজন তালিকা)

(অফিসিয়াল তালিকা প্রকাশ না হলেও গণমাধ্যম সূত্রে আলোচিত নামগুলো)

ক্র. নংনামবিভাগমন্তব্য
এনামুল হক বিজয়ব্যাটারতদন্তাধীন
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতঅলরাউন্ডারতদন্তাধীন
৩–৯অন্যান্য ৭ জনবিভিন্ন বিভাগনাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়নি

সারসংক্ষেপ

বিজয়–মোসাদ্দেকদের বিপিএলে না থাকা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং চলমান তদন্তকে নির্বিঘ্ন রাখতে নেওয়া সতর্কতামূলক সিদ্ধান্ত। তদন্ত শেষে প্রমাণ মিললে শাস্তি হবে, আর প্রমাণ না পেলে তাঁরা আবার আগের মতোই খেলতে পারবেন।